জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সন্দেহে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি এক অভিবাসীকে খুঁজছে পুলিশ। তাঁর নাম আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাউসার। তাজউদ্দিন আইএসের সদস্য সংগ্রহকারী বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাজউদ্দিনকে খুঁজছে, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় এক দশক বসবাস করেছেন।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ঢাকায় গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শুরুতে আইএসের জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করলেও বিদেশি জঙ্গিরা এতে জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে।
সংবাদ মাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, কাউসারের বর্তমান অবস্থান জানে না অস্ট্রেলিয়ায় ফেডারেল পুলিশ এবং এ বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে রাজি না। কাউসারের বাড়ি বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায়।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২২ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে জঙ্গিরা। আইএস এ হামলায় দায় স্বীকার করে।
ডেইলি মেইল জানায়, জঙ্গি হামলায় অংশ নেওয়া তিনজন ঢাকার নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁরা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন।
বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাহাব এনাম খান ডেইলি মেইলকে বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে হামলায় আইএস জড়িত। তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সরকার প্রকৃতপক্ষে আইএসের জড়িত থাকায় বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। তবে এখন নতুন প্রমাণ পাওয়া গেছে, নিখোঁজ বেশ কিছু ছেলে এবং সিরিয়ার সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। হ্যাঁ, দেশি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ আছে।’
শাহাব এনাম খান জানান, এ ছাড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ও জাপানের নাগরিক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, ‘একজন কানাডার, আরেকজন জাপানে পড়াশোনা করেছেন, সুতরাং ক্রমবর্ধমান ঝোঁক দেখা যাচ্ছে—আমরা বহুজাতিক যোগসূত্র পাচ্ছি।’
সম্প্রতি জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত সন্দেহে নিখোঁজ ১০ যুবকের তালিকা প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে তাজউদ্দিনের নাম এ টি এম তাজউদ্দিন বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ঘটনার পর তাজউদ্দিনের স্কুলশিক্ষক মা তাহেরা বেগম লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের আটিয়াতলী গ্রামে তাজউদ্দিনের বাড়ি।
শনিবার রাতে জিডি করার পর তাহেরা বেগম দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ছেলে তাজউদ্দিন যে নিখোঁজ ছিলেন, তা তিনি এত দিন জানতেন না। গণমাধ্যমে খবর দেখে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন।
গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলাকারী যুবকদের কয়েকজন বেশ আগে থেকে পরিবারের কাছে নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর আরো ১০ যুবকের নিখোঁজ থাকার খবর দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানো তাজউদ্দিন ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাড়ি এসেছিলেন বলে তাঁর পরিবার জানায়।
মা তাহেরা বেগম বলেন, ‘রমজানের কয়েকদিন আগে তাজউদ্দিন বাড়িতে ফোন দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে এবং আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়। তাজউদ্দিন ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এক তরুণীকে বিয়ে করার পর সে দেশের নাগরিকত্ব পান। ওই তরুণী ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করে বলে আমরা জেনেছি। ২০১০ ও ২০১২ সালে তাঁদের দুই ছেলেমেয়ের জন্ম হয়।’
তাজউদ্দিনের বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সে ২০০৬ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যায়। সেখান থেকেই সে নিখোঁজ হয়। এখন সে কোথায় রয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা তাকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.