স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করবে
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে শুধু মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদে শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান যুক্ত করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। সংশোধিত বিধি অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত কোনো তালিকা জমা দিতে হবে না।
দেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেই নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয় প্রতীকে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান রেখে আইন পাস হয়। তবে অতীতে স্থানীয় পর্যায়ের এসব নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও বাস্তবে ওইসব নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবমুক্ত ছিল না। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে মানুষের কাছে প্রার্থী সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা তৈরির সুযোগ বাড়বে। স্থানীয় পর্যায়ের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা পর্যায়ে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি সুযোগ পাবে। সেদিক থেকে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ের গত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা নেতিবাচক কিছু প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দলগুলোর মধ্যে, বিশেষত ক্ষমতাসীন দলে বিভক্তি বেড়েছে। নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এর ফলে বেড়েছে সহিংসতা। অবশ্য এর জন্য দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দায়ী করা চলে না। নির্বাচনে সহিংসতা রোধের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর। সেক্ষেত্রে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে এর পুনরাবৃত্তি রোধে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে রোধ করতে হবে এ নিয়ে বাণিজ্যের সব পথ।
জাতীয় বা স্থানীয় যে পর্যায়েই হোক, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে স্বভাবতই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেই সঙ্গে এ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনাও থাকে বেশি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বৈকি। কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী ও স্বাধীন না হলে নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের পদক্ষেপকে অর্থবহ করে তুলতে হলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.