চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষা, বাংলায় দাঁড়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে গত কয়েকদিনে ব্যাপারটি যেন একটু বেশিই চোখে পড়ছে। ভালো খেলতে খেলতেই হঠাৎ যেন কোনো ভূত চেপে বসে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ে হঠাৎ ধসের কথা এখনো কেউ ভোলেননি। ১ উইকেটে ১০৫ থেকে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৮৪ রানে। আজ তৃতীয় ওয়ানডেতেও চিত্রটা কাছাকাছি, ওপেনিং জুটিতে ১০২ রানের পর বাংলাদেশ একে একে সাতটি উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৭৭ রানের মধ্যে। শেষ দিকে অবশ্য নুরুল হাসানের ৪৪ রানের সৌজন্যে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছে ২৩৬ রান। এমন ব্যাটিং পিচে রানটা নিউজিল্যান্ডের জন্য কতটা বাধা হতে পারবে, কে জানে! অথচ কী দুর্দান্ত শুরুই না এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস! আগের দিন দৌড়াদৌড়ি একটু কম করেছেন, আজ সেই খামতিও কমিয়েছেন অনেকটা। স্ট্রাইক রোটেট করেছেন দুজনে। পাশাপাশি বাউন্ডারি তো ছিলই। ২১ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশকে জুটিতে এক শ রানও এনে দেন। ওই সময়টাতে নিউজিল্যান্ডকেই মনে হচ্ছিল অসহায়। কিন্তু মোড়ক লাগল এরপরই, ইমরুলের আউটে। স্যান্টনারের বলে স্লগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে বল উঠে গেল শর্ট থার্ডম্যানে। ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচই নিয়েছেন নিল ব্রুম। ইমরুলের ৬২ বলে ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটা শেষ হয়ে গেল তাতে, যাতে চার ছিল পাঁচটি, ছক্কা একটি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনিংসের একমাত্র ছক্কাও সেটি। ইমরুল আউট হলেও তামিম তো ছিলেন। তাঁর ব্যাটেই বড় কিছুই আশা করছিল বাংলাদেশ। ফিফটি করে সে আশার পালে হাওয়াও দিচ্ছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। যদিও অন্যপ্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আশা যাওয়ার মিছিল ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। তিনে নেমে দ্রুত চারটি চার মারেন সাব্বির রহমান, কিন্তু ১৪ বলে তাঁর ১৯ রানের ইনিংসটি শেষ হলো ম্যাট হেনরির হঠাৎ উঠে আসা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। মাহমুদউল্লাহর ৭ বলের ‘নার্ভাস’ ইনিংস শেষ হতেও বেশি সময় লাগেনি। তা-ও আশা হয়ে ছিলেন তামিম। ৫ চারে ৮৮ বলে ৫৯ রানও করেছিলেন। কিন্তু এরপরই মনোযোগ হারালেন। জিমি নিশামের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে উল্টো তুলে দিলেন আকাশে। দ্বিতীয় ওয়ানডের সঙ্গে তৃতীয় ওয়ানডের মিলটা আরও একটু ‘ভালো’ করতেই কি না, কিছুক্ষণ পর রানআউট হয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসানও। অবশ্য কিউই কিপার লুক রনকির দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়েরও প্রশংসা করতে হয়। সাকিবের ইনিংস শেষ ১৮ রানে। কিছুক্ষণ পর তাঁর পথ ধরে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন মোসাদ্দেকও। জিতান প্যাটেলের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন ১১ রান করে। তানবীরও বেশিক্ষণ থাকেননি, উইলিয়ামসনের বলে বোল্ড হয়েছেন ৩ রানে। কেউ উল্টোপাল্টা শট খেলে, কেউ অর্থহীন ঝুঁকি নিতে গিয়ে মোটামুটি আরেকটি ‘আত্মহত্যা’র গল্পই লিখছিলেন। তামিম-ইমরুলের ব্যাটিংয়ের সময় ২৮০-৩০০ রানের যে লক্ষ্য ছিল, সেটি তো অনেক আগেই মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়। এরপর মাশরাফি আর নুরুল চেষ্টা করে গেছেন ক্ষতির মাত্রাটা কমানোর। শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ২৫০-এর আশাও জাগিয়ে তোলেন নুরুল। কিন্তু তৃতীয় বলে তিনি আউট ৪৪ রান করে, বাংলাদেশেরও আর পেরোনো হয়নি ২৫০। থেমেছে ২৩৬ রানে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.