মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ফের ডাকাতি বেড়েছে। পরিবারের সদস্যদের হাত, পা বেঁধে চুরি-ডাকাতির ঘটনায় প্রবাসী ও ব্যবসায়ী পরিবারের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে পরপর কয়েকটি পরিবারে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার কারণে ডাকাতের ভয়ে রাত জেগে গ্রামবাসীর পালাক্রমে পাহারা চলছে। সর্বশেষ গত রোববার দিবাগত গভীর রাতে শ্রীমঙ্গল শহরের বারিধারা আবাসিক এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সহিদ মো. আব্দুল্লাহর বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আবু সহিদ মো. আব্দুল্লাহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিরও সদস্য। আবু সহিদ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ৮-১০ জনের ডাকাতদল রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসার সামনের জানালার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে। ডাকাতরা পরিবারের সব সদস্যের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। ডাকাতদের কাজে বাধা দিলে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর ডাকাতরা বাসায় ২ ঘণ্টা অবস্থান করে বাড়ির ৫টি কক্ষ তছনছ করে। ডাকাতরা ১৫টি আলমিরা ভেঙে নগদ দেড় লাখ টাকা, মেয়ে ও দুই পুত্রবধূর ১০০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এদিকে ডাকাতের হামলায় আহত দুবাই প্রবাসী তরুণী নাজমিন আক্তার (২৩) অবশেষে মারা গেছেন। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত বুধবার সকালে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। নাজমিন উপজেলার আশিদ্রোণ ইউনিয়নের গাজীপুর বস্তির মৃত আব্দুল মালেকের কন্যা। গত ৭ই নভেম্বর দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার রামনগর গাজীপুর বস্তিতে দুবাই প্রবাসীর নাজমিন আক্তারের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়। মুখোশপরা সংঘবদ্ধ ডাকাতরা তাদের বাড়ি থেকে পৌনে এক ভরি ওজনের দুই জোড়া কানের দুল, নগদ ৫ হাজার টাকা ও মূল্যবান কাপড় লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া (১৯শে ডিসেম্বর) একই ইউনিয়নের আঐ গ্রামের কাতার প্রবাসী মো. দিদার মিয়ার বাড়িতে স্ত্রী সন্তান সবাইকে বেঁধে দেশীয় অস্ত্রের মুখে ঘরের একটি কক্ষে জিম্মি করে ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, জমির মূল্যবান দলিলপত্রসহ প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নেয়। এসময় ডাকাতরা আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে বাড়ির গৃহকর্ত্রী শাহানা বেগম ও তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরী সাদিয়া আক্তারকে হাত মুখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কাতার থেকে বাড়িতে আসা দিদার মিয়ার ছোট ভাই কাতার প্রবাসী কাদির মিয়া জানান, ডাকাতের হামলায় আহত শাহানা বেগম ও সাদিয়া আক্তারকে শ্রীমঙ্গল উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। এদিকে একই রাতে ভূনবীর ইউনিয়নের (২০শে ডিসেম্বর) মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের বাদ আলীসা গ্রামের রহিম মিয়ার বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। ভূনবীর ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুল আহাদ মুঠোফোনে জানান, ১৩ই ডিসেম্বর রাতে রাজপাড়া গ্রামের সালাম মিয়ার বাড়িতে ডাকাতি হয়। একই রাতেই পাত্রিকুল গ্রামের হীরক ভট্টাচার্য্য ও মণি ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চালানো হয়। নতুন করে আবার ডাকাতি শুরু হওয়ার আমরা আতঙ্কে আছি বলে যোগ করেন মেম্বার আবুল আহাদ। তিনি জানান, ডাকাত আতঙ্কে রাজপাড়া, বাদে আলীসা, পাত্রীকুল, কামারপাড়া গ্রামে কয়েক দলে রাজ জেগে পাহারা বসিয়েছে। আশিদ্রোণ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে এক রাতে ৫ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার পরই গ্রামে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপর থেকেই আমরা ডাকাতের ভয়ে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছি। প্রতি রাতেই একেক পাড়ায় ৫/৬ জনে দল বেঁধে দেশি অস্ত্র হাতে নিয়ে গ্রামের মানুষজন পাহারা দিচ্ছেন। পূর্বজামসীর পূর্বপাড়া, মধ্যপাড়া, পশ্চিম জামসীর কাজীরগাঁও, দেবীপুর ও কোনা গ্রামে গ্রামবাসী পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.