মিরপুর সেকশন ১২, মিরপুর ডিওএইচএস, সরকারবাড়ি, উত্তর কালশী, মিরপুর সিরামিক, বেগুনটিলা বস্তি, বুড়িরটেক, চাকুলি, নতুন কুর্মিটোলা ক্যাম্প, শহীদবাগ এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড। ৩ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই ওয়ার্ডে ভোটার ১ লাখ ৬ হাজার ১৭২ জন। আয়তন ও জনসংখ্যায় বেশ বড় এই ওয়ার্ডে থাকেন কয়েক লাখ মানুষ। গত শুক্রবার এলাকা ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার মূল সমস্যা তীব্র গ্যাস-সংকট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাস না থাকায় রান্নাবান্না করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেকেই সকালের নাশতা হোটেল থেকে কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের বাসিন্দা আতাহার আলী বলেন, সকাল থেকেই চুলা জ্বলে না। কখনো কখনো গ্যাস এলেও মোমবাতির মতো জ্বলতে থাকে। রাত ১২-১টার দিকে গ্যাসের চাপ বাড়ে। তখন রান্না করতে হয়। এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত বেগুনটিলা বস্তি, বুড়িরটেক, কুর্মিটোলা ক্যাম্প, টেকেরবাড়ি এলাকায় গ্যাস-সংযোগ নেই। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের রান্না করতে হয় লাকড়ি কিনে। এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ সড়কই ভাঙাচোরা। গর্তে ভরা। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর প্রার্থীরা সড়ক সংস্কার ও নালা নির্মাণের ঘোষণা দিলেও গত দেড় বছরে কোনো কাজ হয়নি। ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৬ নম্বর সড়ক দেখে মনে হয় যেন নদী বয়ে যাচ্ছে। সড়কের ঠিক মাঝ বরাবর খোলা নর্দমা। চলাচলের জন্য খানিক দূর পরপর সিমেন্টের স্ল্যাব বসানো। এই সড়কের বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই সড়কটির মাঝ দিয়ে খোলা নর্দমার দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি বয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা এই ময়লার পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। কালশী নতুন সড়কটি ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় নতুন করে সংস্কার করা হয়। বেশ প্রশস্ত এই সড়কটি বর্তমানে দখলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সড়কের প্রবেশমুখে মিরপুর ১১ নম্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে গড়ে উঠেছে চা-শিঙাড়ার দোকান ও ফলের দোকান। তারপরেই আছে স্যানিটারি সামগ্রী, লোহা ঝালাইয়ের দোকান, লেপ-তোশকের দোকান। অপর পাশের ফুটপাতে সারি সারি লোহালক্কড়ের সামগ্রী বিক্রির দোকান। লোহার গ্রিল, দরজা—সবই রাখা হয়েছে ফুটপাতের ওপর। এই সড়কে আছে অনেকগুলো গাড়ি মেরামতখানা। দেখা যায়, এখানে মেরামতের জন্য আসা গাড়িগুলো ফুটপাতের ওপর রেখে মেরামত করা হচ্ছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রঙের কাজ করা হচ্ছে ফুটপাতের ওপরে। লোকজন ফুটপাত ছেড়ে নাক চেপে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রব বলেন, ‘এলাকাবাসী ভেবেছিল, নতুন রাস্তা হওয়ায় আরামে চলা যাবে। এখন দেখি হাঁটার জায়গাটুকুও খালি নাই। পুরোটাই ব্যবসায়ীরা দখল করে নিয়েছেন। লোকে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছে। রাস্তায় স্পিড ব্রেকার না থাকায় ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।’ ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক দখল করে রাখা হয়েছে বাস। সড়কের অর্ধেকের বেশি জুড়ে দুই সারি করে বাস পার্ক করায় সড়ক হয়ে পড়েছে সংকীর্ণ। বাসগুলো সংকীর্ণ সড়কে ঘোরানোর কারণে লাগছে যানজট। ১২ নম্বর থেকে শুরু করে হারুন মোল্লাহ্ ঈদগাহ মাঠ ও পার্কের সামনে পর্যন্ত এভাবে সড়কের বেশি অংশজুড়ে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার বাস রাখা হয়েছে। কালশী নতুন রাস্তার এক পাশে বেগুনটিলা বস্তি। বস্তিতে প্রায় ১০ হাজার লোকের বাস। বস্তিতে প্রবেশের একমাত্র সড়কটিতে কখনোই পিচ ঢালাই না করায় এর অবস্থা বেহাল। বস্তিতে নেই গ্যাস-সংযোগ, পানির তীব্র সংকট ও পানিতে দুর্গন্ধ, সামান্য বৃষ্টিতেই বস্তির মূল সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আর সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বস্তির বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, রাস্তাটির কারণে বস্তিবাসী বেশি অবহেলিত। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা বলেছিলেন, সবার আগে রাস্তাটা ঠিক করে দেবেন। কিন্তু বলা পর্যন্তই। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে, গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসকের কাছে যেতে কষ্ট বেশি হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.