গল্প বাছাই করে বেছে বেছে মানসম্পন্ন কাজগুলোই এ সময়ে করছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা। বর্তমানে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে সঞ্জিত সরকারের ‘মজনু একজন পাগল নহে’, কায়সার আহমেদের ‘রূপালী প্রান্তর’, ‘মেঘের পালক’ ও বিটিভির ‘চিত্র-বিচিত্র’। এসব নাটক ছাড়াও আরো কয়েকটি নতুন ধারাবাহিকে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ছন্দা। বর্তমানে ব্যস্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সবসময় কাজের মানের ওপর জোর দিই। ভালো গল্প, নির্মাতা সহশিল্পী এসব মনের মতো হলেই অভিনয় করি। এখন যে কাজগুলো চলছে প্রতিটিই আমার পছন্দ হয়েছে বলে করছি। দর্শকের কাছ থেকে বেশ ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। পথে চলতে গিয়ে এসব নাটকে কাজের জন্য বেশ সাড়া পাই। তখন একজন অভিনেত্রী হিসেবে খুব পুলকিত হই আমি। টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের কাজ নিয়েও ব্যস্ত ছন্দা। বর্তমানে শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় ‘অর্পিতা’ নামে একটি ছবির কাজ করছেন। তবে প্রথম লটের শুটিংয়ের পর এখন সেটি বন্ধ আছেই বলেই জানান তিনি। ছন্দা বলেন, প্রথম লটের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে কিছুদিনের মধ্যেই শুটিং শুরু হবে। এ ছবিতে আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করছি। অর্পিতা একটি হত-দরিদ্র ও গ্রামের মেয়ে। সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সে লড়াই করে। এমনই একটি গল্প নিয়ে ছবির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি বেশ আশাবাদী ‘অর্পিতা’ নিয়ে। অনেকেই বলছেন মিডিয়া আগের অবস্থা থেকে অনেকটাই পরিবর্তিত। ছন্দাও তাই মনে করেন। কিন্তু কেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, মিডিয়ায় আগের মতো স্বাধীনভাবে কেউ কাজ করতে পারছেন না। এজেন্সি হয়ে যাওয়াতে দৃশ্যপট অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। এজেন্সিগুলো তাদের মতো করে শিল্পী নির্বাচন করে দেয়। যে কারণে নির্মাতা কিংবা চ্যানেল নিজের মতো করে কাজ করতে পারে না। আর চ্যানেলগুলোও এজেন্সির কাছে অনেকটা আটকে গেছে বলে আমার মনে হয়। আর তাছাড়া দর্শকও আগের মতো নাটক দেখেন না। ভারতীয় চ্যানেলের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। এর কারণ একটাই অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচার। একটা নাটক দেখতে বসলে সেটা বিজ্ঞাপনের কারণে আর দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপন প্রচারকালীন চ্যানেল পরিবর্তন করে ঘুরে এসে আর ওই নাটক খুঁজে পান না। এসব কারণে নাটকের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তবে টিভি চ্যানেলগুলো যদি দায়িত্বের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে তাহলে সমস্যাও অচিরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এদিকে টিভি মাধ্যমে এসব সংকটের সঙ্গে সম্প্রতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল প্রচার। বর্তমানে চার-পাঁচটি চ্যানেল বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে পুরো শোবিজ অঙ্গন। যার ফলে মাঠে নামতে হয়েছে সব শিল্প কলাকুশলীকে। গত ৩০শে নভেম্বর থেকে তারা টানা আন্দোলন করে আসছেন। এখনো সেটা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত ছন্দাও। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল একসময় বিটিভিতেও চলতো। তখন একটি মাত্র চ্যানেল ছিল। আর এখন অনেক স্যাটেলাইট চ্যানেল হয়েছে। প্রতিটি চ্যানেল যদি একটি করে বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করে আর সেটা যদি পিক টাইমেই হয় তাহলে আমরা যারা কাজ করছি তাদের মূল্য থাকছে কোথায়! আমাদের নির্মিত নাটকগুলোর ক্ষতি তো হয়েই যাবে। এটা সত্যিই দুঃখজনক ব্যাপারই বটে। এদিকে ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের দাবিতে শত আন্দোলনের মুখেও চ্যানেলগুলো নির্বিঘ্নে সেটা প্রচার করে যাচ্ছে। আর তারই সূত্র ধরে অনেকে বলছেন, আন্দোলন থেকে কার্যকর কোনো ফল আসছে না। এ ব্যাপারে ছন্দা বলেন, এখনো এ ব্যাপারে কোনো মতামত দেয়া যাচ্ছে না। বড়রা বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সব মিলিয়ে বলা চলে বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। টিভি নাটকে ছন্দার অভিষেক ঘটে জিনাত হাকিমের রচনায় ও নূর হোসেন দিলুর নির্দেশনায় ‘কাজল কালো দিন’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন শ্রাবন্তী ও জয়। বিক্রমপুরের মেয়ে ছন্দা একটি নাটকও নির্মাণ করেছিলেন, যার নাম ‘প্রেম তর্ক’। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন আনিসুর রহমান মিলন। তবে এ মুহূর্তে আর নির্মাণ নিয়ে ভাবছেন না ছন্দা। অভিনয়কে ঘিরেই তার যত পরিকল্পনা। ছন্দা অভিনীত দর্শকপ্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে মুস্তাফা মনোয়ারের ‘স্ত্রীর পত্র’, সতীর্থ রহমান রুবেলের ‘মা’, ‘তিন দুগুণে সাত’, নরেশ ভূঁইয়ার ‘গর্ভধারিণী’, মাহবুবুল আলমের ‘নীলকণ্ঠ পাখির পালক’, শাহাদাৎ হোসেন সুজনের ‘দিগন্ত পেরিয়ে’ ইত্যাদি। অভিনয় ক্যারিয়ারের মতো ব্যক্তি জীবনেও সফল ছন্দা। পর্দায় যেমন কখনো ছন্দ হারাননি তেমনি ব্যক্তি জীবনেও নয়। তাইতো অনেকে বলেন ছন্দার জীবনটা আসলেই ছন্দময়। তিনি নিজেও সে কথা অকপটে বললেন, অভিনয় ও সংসার এ নিয়েই আমার জীবন। বেশ ভালো আছি। ক্যারিয়ারের এতটা সময়ে কখনো বিরূপ প্রভাব পড়তে দিইনি। তেমনি ব্যক্তি জীবনটাকেও বেশ উপভোগ করে আসছি। স্বামী নির্মাতা সতীর্থ রহমান রুবেল। তার সঙ্গে এক ছাদের নিচে বসবাস করছেন ২০০১ সাল থেকে। ১৬ বছরের সংসারে দুই মেয়ে টাপুর-টুপুরকে নিয়ে সুখের জীবন ছন্দার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.