সদ্য বিদায়ী ২০১৬ সালে দেশে সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধির এই হার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এ সময়ে পণ্যমূল্য ও সেবা সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৫.৮১ শতাংশ। ভোক্তার ঝুলিতে যেসব পণ্য ও সেবা রয়েছে সেসব পণ্য বা সেবা পরিবারের মোট ব্যয়ের সঙ্গে তুলনা করে পণ্য বা সেবার ওজনের ভিত্তিতে জীবনযাত্রা ব্যয়ের এই হিসাব করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটির জরিপ শেষে তৈরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই হার আগের বছর ২০১৫ সালে ছিল ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। বলা হয়েছে, কয়েকটি পণ্য ছাড়া সদ্য সমাপ্ত বছরে দ্রব্যমূল্য ছিল বহুলাংশে স্থিতিশীল। ঢাকা শহরের ১৫টি বাজার ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা সার্ভিসের তথ্য এ পর্যালোচনা শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে ক্যাব।
নিয়ন্ত্রণে ১৩ দফা সুপারিশ : এতে নতুন বছরে সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয়ভার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৩ দফা সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ধান-চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং কৃষককে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রদান, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সংশোধন এবং এলপিজি গ্যাসের মূল্য হ্রাস, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলের ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পানি ও গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ, বাড়িভাড়া আইন ১৯৯১ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা, যাত্রী দুর্ভোগ ও যানজট কমানোর লক্ষ্যে ঢাকায় বাস চলাচলের ক্ষেত্রে ফ্যানচাইজ প্রথা প্রবর্তন, রেপিড ট্রানজিট প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ যোগাযোগ খাতের প্রকল্পগুলোর দ্রুত ও সময়মতো বাস্তবায়ন করা। এছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে সেবার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, ভেজাল, নকল ও নিুমানের ভোগ্যপণ্য, ওষুধ ও অন্যান্য পণ্যের প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে প্রণীত আইন-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫-এর দ্রুত বাস্তায়ন, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর কোনো রূপ শুল্ককর বা ভ্যাট আরোপ না করা, আমদানি বাণিজ্যকে অধিকতর প্রতিযোগিতামূলক করা। টিসিবির মাধ্যমে ‘লোকসান-নয়, লাভ-নয়’ ভিত্তিতে মানসম্পন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য নিয়মিত আমদানি ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে : ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সব ধরনের চাল ও ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ডালের দাম গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ। আমদানিকৃত মসুর ডালে বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং দেশী মসুর ডালে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সবচেয়ে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানিকৃত রসুনে ৭২ দশমিক ০৬ শতাংশ। দেশী রসুনে বেড়েছে ৪৭ শতাংশ, চিনির দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ০৫ শতাংশ, লবণে বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৩২ শতাংশ, এবং চা পাতায় ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রতি লিটার গরুর দুধে বেড়েছে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মাংসে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া দেশী থান কাপড়ে ১০ দশমিক ৩৯, শাড়িতে ১২ দশমিক ০৬ এবং গেঞ্জি, তোয়ালে ও গামছায় দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
যেসব পণ্যের দাম কমেছে : সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে আমদানিকৃত পেঁয়াজে ৫০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশী পেঁয়াজে দাম কমেছে ৩৯ দশমিক ৬৮, ধনিয়ায় কমেছে ৩৮ দশমিক ২০ ও কাঁচামরিচে কমেছে ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ। আমদানিকৃত আদায় কমেছে ২২ দশমিক ৯৩, দেশী আদা ১৯ দশমিক ৫৩, পান-সুপারিতে ১১ দশমিক ৫০, গুঁড়া দুধে ১১ দশমিক ০৮, শাক-সবজিতে ৯ দশমিক ৭৪, কাপড় কাঁচার সাবানে ৯ দশমিক ৫৫, মাছে ৬ দশমিক ৮৬, ডালডা ও ঘিতে ৪ দশমিক ৩০ ও আটায় কমেছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। এর মধ্যে খোলা পাম তেলে কমেছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৪ দশমিক ৩৩ এবং খোলা সয়াবিন তেলে কমেছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.