ম্যাকলিন পার্কের পাশেই আরেকটা মাঠ। সেটির নামের শেষেও ‘পার্ক’, নেলসন পার্ক। কাল সকালে এই নেলসন পার্কের নেটে এলে যে কেউ চমকে যেতেন। পরদিন সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। অথচ বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা কিনা অনুশীলন করছেন লাল বলে! নেপিয়ারের আবহাওয়ার মতোই বিভ্রান্তিকর ব্যাপারটা। তবে যাঁরা এর মধ্যেই জেনে গেছেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল আছে ২২ ক্রিকেটার নিয়ে, তাঁদের কাছে এটা নতুন খবর নয়। নেলসন পার্কে কাল সকালে যাঁরা লাল বলে অনুশীলন করছিলেন, ওয়ানডে সিরিজেও তাঁরা প্রতিদিনই তা করে গেছেন। জাতীয় দলের মূল ঝাঁকের বাইরে এই কয়জন ক্রিকেটার আসলে এখানে আছেন টেস্ট সিরিজের অপেক্ষায়। দু-একজন আবার তা-ও নয়। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগের দিন টেস্টের অনুশীলনটা ভালোভাবে হলেও বৃষ্টির কারণে হয়নি টি-টোয়েন্টির অনুশীলনই। নেলসন পার্কে ক্রিকেটারদের গা গরম ঠিকভাবে শুরু না হতেই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি এবং তাতে নেটে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন না করেই টিম বাসে ফিরে আসেন ক্রিকেটাররা। পরে ইনডোরের নেটে চার-পাঁচজন ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন। সেটাও না করার মতোই। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি প্রায় সারা দিনই হয়েছে থেমে থেমে। সূর্যের দেখা তেমন একটা মেলেনি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টি ছিল আজ সকালেও। তবে আশার কথা, সে শঙ্কা কেটে যাচ্ছে। আর যদি আজ বৃষ্টি হয়ও, সেটা দুপুরের দিকেই হয়ে যাওয়ার কথা। খেলা শুরুর সময় অর্থাৎ সন্ধ্যায় নেপিয়ারের আকাশ থাকার কথা পরিষ্কার। তাতে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশও পরিষ্কার হবে কি না, তা আগেই বলা কঠিন। নিউজিল্যান্ডে আসার পর থেকেই কঠিন সময় পার করছে দলটা। ওয়ানডে সিরিজে কোনো দিন বোলিং ভালো হয়েছে তো ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় নেমেছে, কোনো দিন আবার ব্যাটিং-বোলিং কিছুই হয়নি। দুই বছর ধরে সাফল্যের ধারায় থাকা বাংলাদেশ দল যেন নিউজিল্যান্ডে আসেনি, টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে গেছে পুরোনো দিনে! এ রকম বাস্তবতায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ দুই ধরনের সম্ভাবনাই দেখাচ্ছে। ২০ ওভারের ক্রিকেট যেহেতু বড় দল-ছোট দলের পার্থক্য কমিয়ে আনে, বাংলাদেশের সামনে আজ সুযোগ আছে ইতিহাস লেখার। সে ইতিহাস অবশ্য যতটা না বাংলাদেশ দলের, তার চেয়ে বেশি হবে ম্যাকলিন পার্কের। নেপিয়ারের এ মাঠে যে আজই হবে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ! ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ধরেই নিচ্ছেন, ওয়ানডের মতো ম্যাকলিন পার্কের উইকেটও হবে ব্যাটিংবান্ধব। আগে ব্যাট করে জিততে হলে ১৮০-১৯০ রান তো করতেই হবে। টি-টোয়েন্টির শক্তিমত্তার কথা বললে সিরিজে এগিয়ে থাকে স্বাগতিকেরাই। সর্বশেষ ১০টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির আটটিতেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ভারতে অনুষ্ঠিত গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়েছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। আর বাংলাদেশ তো টি-টোয়েন্টিতে বরাবরই পিছিয়ে। সর্বশেষ চার ম্যাচেই হার, এর মধ্যে গত বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হেরেছে নিউজিল্যান্ডের কাছেই। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে দুবার ‘বাংলাওয়াশ’ করার গৌরব থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে তাদের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখা হয়নি। চার ম্যাচের চারটিতেই হার, দুটিতে আবার বাংলাদেশের ইনিংস ৮০-ও পার হয়নি। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৭০ ও ৭৮ রানের দুটি ইনিংসই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচের একটিই শুধু নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হয়েছে। হ্যামিল্টনে ২০১০ সালের সে ম্যাচে মাত্র ৭৮ রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ দল। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ২৭ বলে অপরাজিত ৫৬ রান জয়টা সহজ করেছিল নিউজিল্যান্ডের। বাংলাদেশের বিপক্ষে এরপর আর একটি মাত্র টি-টোয়েন্টিই খেলেছেন ম্যাককালাম। ২০১২-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সে ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ড দলে এখন ম্যাককালাম নেই, এটা বাংলাদেশের একটা বড় স্বস্তি। ওয়ানডের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ স্কোয়াড ঘোষণা করছেন কোচ-নির্বাচকেরা। প্রথম ওয়ানডের ১৫ জন থেকে একাদশের বাইরে থাকছেন সম্ভবত তাসকিন আহমেদ, শুভাগত হোম চৌধুরী, তাইজুল ইসলাম ও শুভাশিস রায়। ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে ফেরার কথা শেষ দুই ওয়ানডেতে দলের বাইরে থাকা সৌম্য সরকারের। তাসকিন টানা তিন ওয়ানডে খেলেছেন, সম্ভাবনা আছে এই সিরিজেই টেস্ট অভিষেকের। সে কারণেই রুবেল হোসেনকে দলে এনে এই পেসারকে বিশ্রাম দেওয়ার চিন্তা। টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডও আর আগের দলটি থাকছে না। মিডল অর্ডারের শক্তি বাড়াতে অভিষেক হতে পারে টম ব্রুসের। মার্টিন গাপটিলের চোটের সুবাদে সুযোগ পেয়েছেন নিল ব্রুমও। এ ছাড়া স্কোয়াডে আছেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে ছয়টি ওয়ানডে খেলা অলরাউন্ডার বেন হুইলার। ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে নিয়ে মনে হচ্ছে বেশ আশাবাদী নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম। তবে বাংলাদেশের মতো এখানে অতটা ফলাও করে ক্রিকেটের খবর ছাপা হয় না। রাগবিই নিউজিল্যান্ডে জনপ্রিয়তম খেলা। রাগবিতে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড, সর্বশেষ দুবার শিরোপা জিতেছে তারা টানা। একটা ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যদি ছয় হাজার দর্শক মাঠে যায়, রাগবি দেখতে যায় ২০ হাজার। ভাগ্যিস, বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডে রাগবি খেলতে আসেনি!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.