দক্ষিণ কোরিয়ার ‘রাসপুতিন’ হিসেবে পরিচিত চোই সুন-সিল। যে দুর্নীতির অভিযোগে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাই অভিশংসনের মুখে পড়েছেন, তার মূলে রয়েছে এই সুন-সিল। তবে খবর সেটা নয়। নতুন খবর হলো, চোই সুন-সিলের মেয়ে চাং ইয়ো-রা’কে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডেনমার্কে। সিউলের প্রসিকিউটররা সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মিডিয়াকে জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, চাং ইয়ো-রা পলাতক ছিলেন। যেসব মানুষের দুর্নীতি দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তাল করে তুলেছে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই যুবতী। ওই দুর্নীতির কারণে প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার আন্দোলন জোরদার হয়। এই দুর্নীতির মূলে থাকা চাং পালিয়ে গিয়েছিলেন ডেনমার্কে। রোববার সেখানকার পুলিশ ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও অবস্থান করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রসিকিউটররা এতটুকু জানিয়ে বলেছেন, তাকে সিউলে ফিরিয়ে আনার জন্য ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অভিযোগ আছে, প্রেসিডেন্ট পার্কের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাশীল হলেন চোই সুন-সিল। তাদের মধ্যে গোপন এক আস্থা গড়ে উঠেছিল। এ সম্পর্ককে ব্যবহার করে চোই শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করেছিলেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭ কোটি ডলার ডোনেশন দিতে। এর মধ্যে রয়েছে স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও। এর বাইরে নিজের প্রভাব খাঁটিয়ে চোই তার মেয়েকে সিউলের অভিজাত এহা ওমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিশ্চিত করেন। তদন্তে দেখা গেছে, তার মেয়ের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা বা যোগ্যতা থাকা প্রার্থীরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি। ফলে প্রেসিডেন্ট পার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে চোইয়ের সঙ্গে আঁতাতের। এ আঁতাতের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেছেন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট পার্ক। গত ৯ই ডিসেম্বর এসব কেলেংকারির কারণে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়। তার নির্বাহী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় প্রধানমন্ত্রী হাওয়াং কিয়ো-আহন এর কাছে। তিনিই এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডেন্ট পার্ককে অভিশংসনের বিষয়টি বিবেচনা করছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। এ বিষয়ে ৬ মাসের মধ্যে তাদের একটি রায় দিতে হবে। সেই রায় হওয়ার আগে প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে অবিলম্বে প্রেসিডেন্ট পার্ককে ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সাংবিধানিক আদালত যদি অভিশংসন নিশ্চিত করে তাহলে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.