অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি কাপ্তাইয়ের চিৎমরমে শত বছরের পুরনো বৌদ্ধদের পুন্যতীর্থস্থান ঐতিহ্যবাহী ”বৌদ্ধ বিহার” অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা সুপ্রাচীন বৌদ্ধ বিহারটি পাক-ভারত সহ উপ মহাদেশের ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নয়নাভিরাম চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার এলাকাকে ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলায় এ ধরনের সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন স্পট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে উপজেলায় দু’একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হলেও তারা অর্থনৈতিক কারনে এর প্রসার ঘটাতে পারছেনা।স্থানীয় সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ইউনিয়নের ইউপি সদস্য উমং চৌধুরীর পিতামহ চন্দ্র চৌধুরী ১৯০৫ সালে প্রথম বৌদ্ধ বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে ১৯২৭ সালে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বর্মী নাগরিক চিৎমরম এলাকায় এসে বসবাস করতে থাকেন। ঐ ব্যক্তি নিজ অর্থ ব্যয় করে তখন র্বামা থেকে কাঠ সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ শিল্পী এনে নানা কারুকার্য্যরে সমন্বয় ঘটিয়ে বৌদ্ধ বিহারের শৈল্পিক রুপ দেন। এভাবেই ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারটি পুর্নতা লাভ করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চিৎমরম এলাকায় গড়ে ওঠা সম্পুর্ন কাঠের তৈরি বৌদ্ধ বিহারটি দেখলে চীনা সং®কৃতির নিদর্শন বলে মনে হয়। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বৌদ্ধ বিহারের দায়ক-দায়িকারা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে একটু দক্ষিনে নতুনভাবে শৈল্পিক ও নান্দনিক কারুকার্যমন্ডিত ইটের গাথুনি দিয়ে নতুন বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে। পুরনো বৌদ্ধ বিহারটিতে ১৯০৫ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন স্বর্গীয় ভিক্ষু উ পারাক্ষামা মহাথের।
তার মৃত্যুর পর ১৯৪০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিহারের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন উ পান্ডিত্য মহাথের। তার মৃত্যুর পর ১৯৯০ সাল থেকে চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন উ পান্ডিত্য মহাথেরর প্রধান শিষ্য উ পামোখা মহাথের।প্রতিদিন শত শত পর্যটক দর্শনার্থী এই বৌদ্ধ বিহার দেখার জন্য দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন।
প্রতি বছর প্রবারনা পুর্ণিমা ও বাংলা বর্ষ বিদায় এবং নববর্ষের আগমন উপলক্ষে ”সাংগ্রাই উৎসব” তিনদিন ব্যাপী পালিত হয়। উৎসব চলাকালীন এখানে মেলা, যাত্রা, নাটক সহ নানা অনুষ্ঠান হয়। লাখ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও পাহাড়ী বাঙ্গালী ধর্ম বর্ণ নির্র্বিশেষে প্রচুর জনসমাগম ঘটে চিৎমরমে। এছাড়া বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরনের এ উৎসবকে স্বাগত জানাতে প্রতি বছর চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে দেশের বহু খ্যাতিমান ব্যক্তির আগমন ঘটে।
এ সময় অনেক কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সাংবাদিক সহ প্রচুর বিদেশীও বর্ষ বরন অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য ছুটে আসেন কাপ্তাইয়ের চিৎমরমে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই বৌদ্ধ বিহার এলাকা ঘিরে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চিৎমরম সহ কাপ্তাই হবে পর্যটন শিল্পের এক সম্ভাবনাময় নগরী।
সূএ: ইন্টারনেট
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.