প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্রে এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ডকে বাস্তব রূপ দেয়ার সত্য গোপন করে তাকে খারাপ মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য একশ্রেণির মিডিয়ার তীব্র নিন্দা করেছেন। জামায়াত-শিবির গত কয়েক বছরে তাকে বেশ কয়েকবার হত্যার ষড়যন্ত্র করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লিটনের জীবনের ঝুঁকি এবং তাকে বার বার হত্যার ষড়যন্ত্র তুলে না ধরে একশ্রেণির মিডিয়া বরং তাকে একটি ছোট্ট ছেলেকে গুলি করার একতরফা ঘটনায় জড়িয়ে চরিত্র হননের চেষ্টা করে। প্রকৃত অর্থে সেদিন লিটনকে হত্যার জন্য হামলা করা হয় যেখান থেকে বাঁচতে গিয়ে গুলিতে আহত হয় আওয়ামী লীগ কর্মীর এক ৯ বছরের ছেলে।’ দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘ওর ওপর বার বার হামলা হয়েছে। মাঝে একটা ঘটনা ঘটার পর তার কাছ থেকে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে নেয়া হয়। তারপর থেকে সে আতঙ্কে থাকতো সবসময়, কখন তার ওপর হামলা হয়। শেষ পর্যন্ত তাই হলো, তাকে হত্যা করা হলো।’ শেখ হাসিনা বলেন ‘সে (লিটন) স্বাধীনতার পক্ষের ছিল বলেই জীবন দিতে হলো। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ছিল বলেই এমনটা হলো’। শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভার উদ্বোধনী ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা জিনিষ আমার খুব খারাপ লাগছে ভাবতে যে, মাঝখানে একটা ঘটনা ঘটে যায়- একটা বাচ্চা ওর গুলিতে আহত হলো। সেটা নিয়ে পত্র-পত্রিকা এমনভাবে লেখালেখি করে তার চরিত্র হনন করা হলো। অথচ প্রকৃত ঘটনাটা কেউ তুলে ধরলো না। যেহেতু সে সবসময় সতর্ক ছিল, ওর লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল তাই সে ওইখান থেকে কোনোরকমে বেঁচে আসে এবং ওই সময় গোলাগুলিতে বাচ্চাটি আহত হয়। যে আহত হয় সেও আমাদের আওয়ামী লীগেরই এক কর্মীর ছেলে। কিন্তু সেটাকে এমনভাবে লেখা হলো তার বিরুদ্ধে মামলাও হলো। স্বাভাবিকভাবে মামলা হলে অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল হয়। অস্ত্রটাও সীজ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এইযে তার অস্ত্রটা নিয়ে যাওয়া হলো সে সময় থেকে সে সবসময় একটা আতংকে থাকতো তাকে আক্রমণ করা হবে। ঠিক সেটাই ঘটলো। তার বাসার ভিতরে ঢুকে গুলি করে তাকে হত্যা করলো। প্রধানমন্ত্রী ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় জামায়াত-বিএনপির বিভীষিকার রাজনীতির কথা স্মরণ করে বলেন, তখন লিটনই ওইসব ভুক্তভোগী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। ওই আন্দোলনের নামে জামায়াত অনেক নাশকতা করতে চেয়েছিল। লিটন তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। সে জন্য তার ওপর জামায়াতের ক্ষোভ ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, তখন সুন্দরগঞ্জে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে প্রতিরোধ করেছে সে (লিটন)। পরে সে লন্ডনে পড়ালেখা করতে যায়। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সে ডিপ্লোমা নিয়ে দেশে ফিরেও আওয়ামী লীগ করা শুরু করে। থানার সভাপতিও নির্বাচিত হয়। তারপর তাকে আমরা মনোনয়ন দিলে সে সেখান থেকে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি জানি না, ওদের আর কী লক্ষ্য আছে। আন্দোলন করে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। এটাই তাদের চরিত্র। এরাই তো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। খুনি-অপরাধীর সাথী খালেদা জিয়া। তিনি অন্যায় করেন, অন্যায় প্রশ্রয়ও দেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালেও সে দলের অনেক এমপি-নেতাকে হত্যার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড, গাজীপুরের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকান্ড এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন। এর আগে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন এবং দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে এই ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরে তাঁর বদরুন্নেসা কলেজে পড়াশোনাকালীন অবস্থায় ছাত্রলীগে সক্রিয় কর্মী থাকার দিনগুলিও স্মরণ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.