বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি আজ। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক দিন। ভয়াল সহিংসতা-নাশকতার পথ পেরিয়ে এ দিন গণতন্ত্রের নবযাত্রার ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই দিনটিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সংগঠনের সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর রাসেল স্কয়ার প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং একই সময়ে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা দুটিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আজ ৫ জানুয়ারি রাজধানীসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতবারের মতো এবারও যাতে বিএনপি নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য এ পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। বিএনপি যাতে ৫ জানুয়ারি কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রাজধানীর সকল প্রবেশমুখ এবং অলিগলিসহ নগরীর দুই শতাধিক স্থানে দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে সতর্ক প্রহরায় থেকে বিজয়োত্সব পালন করবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষ। এ ছাড়া সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি মনে করে, একাত্তরে যে চেতনা এবং রাজনৈতিক শপথে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল সেই চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র অর্জন বিলীন করার আকাশ সমান ষড়যন্ত্র থেকেও জাতি রক্ষা পায় এ দিন। জাতীয় জীবনে এ দিনটি গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় দিন। দিবসটিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ‘ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিশেষ করে ভয়াল নাশকতা, ধ্বংসযজ্ঞ, নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা, লাগাতার অবরোধ-হরতালের নামে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে পুরো দেশকেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ বাসে-ট্রেনে আগুন, ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিএনপি জামায়াত জোট। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের আগের দিন বিএনপির সন্ত্রাসীরা আগুনে পুড়িয়ে দেয় ১১১টি ভোটকেন্দ্র। নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিনতাই হয়, কুপিয়ে হত্যা করা হয় নির্বাচনী কর্মকর্তাকে। ভোটের দিনও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক নির্বাচনী কর্মকর্তা। মৃত্যুবরণ করেছেন কেউ কেউ।
একের পর এক হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, হুমকি-ধামকির পরও জনগণ ২০১৪ সালের এই দিনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রদান করার জন্য ভোট কেন্দ্রে যান। আতঙ্ক, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে শতকরা ৪২ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। দৃঢ়তার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তখন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দৃঢ় নেতৃত্বে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি গতকাল এক বিবৃতিতে আজ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দেশের সর্বস্তরের জনগণকে গণতন্ত্রের বিজয়ের এই ঐতিহাসিক দিনটি উত্সবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
জাসদ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা দিবস পালন করবে আজ
আজ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু)। এ উপলক্ষে সকাল ১১টায় জাসদ ঢাকা মহানগর সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাসদের সভাপতি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সভায় প্রধান অতিথি এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মীর আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সভায় জাসদের কেন্দ্রীয় ও মহানগর শাখার নেতারা বক্তব্য রাখবেন।