পর্যটনে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে সিলেট। এতদিন বেসরকারি উদ্যোগ ছিল। এবার সরকার সিলেটের পর্যটন নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। প্রথমেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, সিলেটের মতো পর্যটনবহুল এলাকা আর কোথাও নেই। সিলেটে কেউ বেড়াতে এলে দুই কিংবা তিন দিনের মধ্যে সব উপভোগ করা সম্ভব নয়। এর জন্য পর্যটকদেরই সময় হাতে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সেই অনুযায়ী পর্যটন মেলে ধরা হচ্ছে না সিলেটে। বেসরকারি খাতের উদ্যোগেই সাধারণ মানের সেবা নিয়ে তুষ্ট থাকতে হচ্ছে পর্যটকদের। এবার সিলেটের প্রচুর সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত পর্যটকদের স্রোত রয়েছে সিলেটে। কিন্তু সিলেটে এসে হতাশ হচ্ছেন পর্যটকরা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সিলেটের জাফলং। সবার কাছে পরিচিত এক পর্যটন স্পট। সিলেটে বেড়াতে আসা প্রায় সব পর্যটকই একবার ঘুরে আসে স্বপ্নের জায়গা জাফলংয়ে। কিন্তু এসেই তারা হোঁচট খান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। এ কারণে প্রাইভেট যানবাহন যায় না। আর গেলেও দুই হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। জাফলং যাওয়ার রাস্তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙা-চোরা। খানাখন্দে ভর্তি এসব রাস্তায়। ফলে পর্যটকরা শখের বসে জাফলং গেলেও রাস্তার কারণেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর তামাবিল স্থলবন্দর এলাকা থেকে বল্লাঘাট পর্যন্ত জাফলং রাস্তার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। বিছনাকান্দি দেশজুড়ে এক পর্যটন স্পট। ভারত সীমান্তে পাহাড় ঘেরা বিছনাকান্দিতে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব নাজুক। বিছনাকান্দিতে যেতে চায় না প্রাইভেট যানবাহন। প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙা রাস্তা পাড়ি দিয়ে পর্যটকদের পৌঁছতে হয় বিছনাকান্দি। কিন্তু জরাজীর্ণ রাস্তায় যে পর্যটকরা একবার ভ্রমণ করেন তারা আর দ্বিতীয় দফা যেতে চান না। রাস্তাগুলোর অবস্থাও একই।- এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সিলেটের পর্যটনকে ব্রান্ডিং করার উদ্যোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিলেটের ব্যবসায়ীরাও পর্যটন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সালাউদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের সময় সিলেটের পর্যটন খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে চাইছেন। আর প্রায় হাজার কোটি টাকা পর্যটনখাতে বিনিয়োগের জন্য পাইপ লাইনে রয়েছে। তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলেও সিলেটে পর্যটনখাত গোটা বিশ্বের কাছে ব্রান্ডিং করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তাহমিদ আহমদ জানিয়েছেন- সিলেটে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসছেন। সেই ভাবে তারা সমাদৃত হচ্ছেন না। সিলেটের হোটেল-মোটেলের অভাব নেই। সে ক্ষেত্রে পর্যটকরা কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। কিন্তু পর্যটন এলাকাগুলোতে সুযোগ-সুবিধা কম। স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। বিশ্রামের জায়গা নেই। এসব নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় বলেন, পর্যটকদের সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সিলেট উইমেন্স চেম্বার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল ও কলেজের শিক্ষিত মেয়েদের দিয়ে গাইড ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারী পর্যটকরা সিলেটে এসে যাতে নারীদের কাছে সব ধরনের সেবা পান সে বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন গতকাল মানবজমিনের কাছে সিলেটের পর্যটন নিয়ে সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের পর্যটনকে ব্রান্ডিং করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সিলেট সফর করে গেছেন। তিনি বলেন, বিছনাকান্দিতে একটি বড় রাস্তা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাফলংয়ের রাস্তা ও কোয়ারি অভ্যন্তরের রাস্তার জন্য বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় একটি ৫ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা খুব দ্রুত দৃশ্যমান হবে। আর সেটি হলে সিলেটের পর্যটন খাত গোটা বিশ্বের ব্রান্ড হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.