সত্যি ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মিত ‘মাঝি দ্য মাউন্টেন ম্যান’ সিনেমার বাস্তব চিত্র দেখা গেল ভারতের কেরালায়। সেখানকার আংশিক পঙ্গু এক বৃদ্ধ একাই একটা পাহাড় কাটার কাজ শেষ করে ফেলেছেন। তিন বছর ধরে পাহাড় কাটছেন তিনি। প্রতিদিন একটু একটু করে কাটার পর শেষমেশ সেই পাহাড় কেটেই রাস্তা বের করেছেন তিনি। খবর এনডিটিভির।
কেরালার তিরুঅনন্তপুরমের শশী জি আধা পঙ্গু। তার একটা হাত ও পা একেবারেই অচল। বড়সড় ওই পাহাড় কাটতে তাই মূলত বাম হাতটাই ছিল তার ভরসা। তার অন্য হাতটা কর্মক্ষম নয়। কাজ করা তো দূরের কথা, ওই হাতটি ভালো করে নাড়তেও পারেন না। ঠিক যেমন ডান পা-টাও কাজ করে না। তাই হাঁটতেও পারেন না ঠিক করে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত সেই শরীর নিয়ে দিনের পর দিন তিনি কেটে গেছেন পাহাড়।
কারণ, তার বাড়ি পর্যন্ত একটা রাস্তা চাই। সেই রাস্তাই তাকে এনে দিতে পারে একটা তিন চাকার গাড়ি। যে গাড়ি ঘুরিয়ে দেবে তার ভাগ্যের চাকা। রাস্তার কাজ এখন প্রায় শেষ।
আপাতত পরের অংশটুকু নিয়েই আশায় বুক বেঁধেছেন ওই বৃদ্ধ। এখন তার বয়স ৫৯। এক সময় নারকেল গাছ বেয়ে তরতর করে উঠে যেতেন। কিন্তু, ১৮ বছর আগে হঠাৎ এক দিন সকালে কাজ করতে গিয়ে লম্বা এক নারকেল গাছ থেকে পড়ে গেলেন। আর খোয়ালেন একটি হাত ও পায়ের সক্ষমতা।
তিনি একবার পঞ্চায়েতকে রাস্তা বানিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিলেন। পঞ্চায়েত তা খারিজ করল না। বরং নিশ্চিতভাবেই জানিয়ে দিল, রাস্তা মিলবে। কিন্তু, দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। রাস্তা আর হয় না। পাহাড় কেটে কীভাবেই বা হবে!
বেশ কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর শশী নিজেই সে কাজে হাত দিলেন। গত তিন বছর ধরে প্রতি দিন শাবল, কোদাল, গাঁইতি নিয়ে এক হাতের ভরসায় কেটে গেছেন পাহাড়। রোজ নিয়ম করে ৬ ঘণ্টা। প্রথম দিকে পাড়ার লোকজন হেসেছে। তবুও দমেননি। তার কথায়, ‘আমি শুধু রাস্তা কেটে গেছি। কারণ, সবাই ভেবেছিল আমি পারব না। নিজেকে নিজের কাছেই প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া এটা আমার ফিজিওথেরাপির কাজও করত। পঞ্চায়েত আমাকে গাড়ি দেয়নি। আমি গ্রামবাসীকে একটা রাস্তা তো দিতে পারলাম। সেটাই বা কম কিসের।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.