এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাঙালি জাতির স্বাতন্ত্র্য, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, আবহমান ঐতিহ্য-আমাদের ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার বন্ধন আমাদের অনেক বেশি। হাজার হাজার মাইলের ব্যবধানে, এত দূরে এই প্রবাসেও তার স্পর্শ আমাদের দেহে-মনে-প্রাণে এসে লাগে! সে স্পর্শ আর ছোঁয়াটুকুই আমাদের অনুপ্রেরণা, সে স্পর্শের চেতনাই আমাদের উদ্দীপিত করে শত বাধা আর ব্যস্ততার মাঝেও কিছু একটা করার সবাইকে নিয়ে। আকাশলীনা-দখিনের জানালায় বাংলার মুখ-২০১৬, গত বছরের এই আয়োজন সে স্পর্শ ও আদর্শকে সামনে রেখেই। সবাই কে ধন্যবাদ, কাছের এবং দূরের যারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করেছেন এ ক্ষুদ্র আয়োজনকে। এ বছর আইডাহো অঙ্গরাজ্য থেকে এ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল ও আলোচিত কণ্ঠশিল্পী ‘আবির আশফাকুর রহমান’ আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন গান গাইতে। পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে ছিল স্থানীয় কবি, শিল্পী, শিশুশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের কবিতা, গান, নাচ, অভিনয় এবং আবহমান বাংলার কালচারাল প্রেজেন্টেশন’ ৫২ থেকে’ ৭১ এবং বর্তমান বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন প্রাণবন্ত শৈল্পিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় ‘আকাশলীনা’র সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ ফেরদৌস শিবলীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। সঞ্চালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেন শামীম মোহাম্মদ মুরশিদ ও হাসান ফয়সাল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে দর্শকদের উদ্দেশ্যে করা বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কুইজের আয়োজন এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ ছিল আকর্ষণীয় ও অনুষ্ঠানে নতুন সংযোজন! স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন খায়রুল হাবিব পুলক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে আবৃত্তি করেন মাহিন আহমেদ এবং দ্বৈত কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন সিরাজুম মুনিরা টিসা ও আবদুল্লাহহিল কাফি। দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নাচে অংশগ্রহণ করেন তাশফিয়া শেহজাবীন, রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে তামান্না চ্যাটার্জি এবং লোকসংগীতের সঙ্গে হৃদিতা জামান। অনুষ্ঠানে আবির রহমান ছাড়াও গান পরিবেশন করেন উমেশ, উন্মেষ ও বনানী চক্রবর্তী। আধুনিক গান পরিবেশন করেন নীলাম্বরি সোহানা এবং যুগ্ম সংগীতে অংশগ্রহণ করেন তাজরীন সুপ্তি ও জাবেদ রাসেল। মাহদি-রাহাত-রাজীব এর যৌথ গান পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর ও অসাধারণ! সুধীমহলের প্রশংসা ও করতালিতে মুখরিত হয় গোটা অনুষ্ঠানস্থল। অকালপ্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত মঞ্চনাটক ‘নুরুলদিনের সারা জীবন’ থেকে অংশবিশেষ পাঠ ও অভিনয় করেন বিটিভির একসময়ের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেত্রী শায়লা খান। তাঁর সৃজনশীল অভিনয় ও অনবদ্য উচ্চারণ “জাগো বাহে, কুন্ঠে সবাই” অনুষ্ঠানে নিঃসন্দেহে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে। এ ছাড়া বিজয়ের ৪৫ বছরকে সামনে রেখে প্রকাশ করা হয় কামরুন জিনিয়া সম্পাদিত ‘শাবাশ, বাংলাদেশ’ নামে চমৎকার একটি শুনানির। বরাবরের মতো অনুষ্ঠানের মাঝামাঝিতে পরিবেশিত হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, মিষ্টি, চা এবং পান-সুপারি। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী আবির রহমানকে ‘আকাশলীনা’ অরগানিজেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ ‘সম্মাননা’ জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যেও প্রদান করা হয় ‘পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড মেডেল’। ‘আকাশলীনা’ লিটারেরি অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন সকল পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা জানাই।