একঘেয়ে জীবন সবার কাছেই বিরক্তিকর। আর তা যদি হয় বন্দিজীবন, তাহলে তো কথাই নেই। এটা শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই নয়, পশুপাখির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। খাঁচায় বন্দী অনেক প্রাণীকেই ছটফট করতে কিংবা নিস্তেজ হয়ে পড়তে দেখা যায়। কখনো কখনো তো তাদের মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে যায়। যেমনটা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়ার পার্থ চিড়িয়াখানায় পুত্র মাস নামের হাতিটির ক্ষেত্রে। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অভিনব এক পদ্ধতি বদলে দিয়েছে এই হাতির জীবন। হাতির স্মৃতিশক্তি প্রখর, তা অনেকেরই জানা। তবে তার ঘ্রাণশক্তিও যে খুব প্রখর, তা হয়তো খুব কম মানুষই জানেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতির দেহেই সবচেয়ে বেশি ঘ্রাণ শনাক্তকারী জিন থাকে। এই শক্তি কাজে লাগিয়েই পুত্র মাসের একঘেয়ে জীবন পাল্টে দিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। অস্ট্রেলিয়ার পার্থ চিড়িয়াখানা দেশটির সাউথ পার্থ এলাকায় অবস্থিত। পুত্র মাস এখানকার একমাত্র এশিয়ান পুরুষ হাতি। চিড়িয়াখানাটির প্রাণিস্বাস্থ্য ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক পিটার মাওসন বলেন, চিড়িয়াখানার কর্মীরা আবিষ্কার করলেন, একঘেয়ে বন্দিদশার কারণে আচরণ বদলে যাচ্ছে পুত্র মাসের। এখানকার অন্য দুই মেয়ে হাতির তুলনায় তার মেজাজ বেশির ভাগ সময় চড়া থাকে। কর্মীরা তার সময়টা উপভোগ্য করতে ঘ্রাণ শুঁকে নানা কিছু শনাক্তের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। লেবুর পাতা, কফি, পশম, পালক এবং প্রাণীর মূত্রের গন্ধসহ হরেক রকম ঘ্রাণ শনাক্ত করতে শেখার পর দেখা গেল, প্রতিটি লুকানো বস্তু আবিষ্কারের পর পুত্র মাস হাঁক দিচ্ছে।
পিটার মাওসন বলেন, চিড়িয়াখানার কর্মীদের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সফল হয়েছে। পুত্র মাসের একঘেয়ে জীবন এখন ‘আলোকিত’। সেই সঙ্গে তাকে রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত চিড়িয়াখানার কর্মীর সঙ্গেও তার সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। খেলাটা বেশ উপভোগ করছে হাতিটি। খেলা শুরুর প্রস্তুতি শুরু করলেই পুত্র মাসের আচরণে আনন্দের স্ফুরণ পরিলক্ষিত হয়।
পার্থ চিড়িয়াখানার প্রাণিস্বাস্থ্য ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক আরও বলেন, এখন তাঁরা বাকি দুই মেয়ে হাতির জন্যও একই উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি চিড়িয়াখানার অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে, যারা হয়তো হাতির মতো ততটা বুদ্ধিমান নয়। আমাদের বড় বিড়াল (বাঘ, সিংহ), হায়েনা, ভালুক এবং ডোরাকাটা কুকুরদেরও ঘ্রাণশক্তি প্রখর।’
হাতির ঘ্রাণশক্তির ব্যবহার এই প্রথম হলো না। এর আগে তার এই শক্তি কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্ফোরক খোঁজার কাজ করেছেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.