খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেল লাইনের বেশির ভাগ স্লিপার নষ্ট এবং রেল লাইন অনেক পুরনো ও ব্যবহার অনুপযোগী। এই রেল লাইনের সংযোগ স্থলের অনেক জায়গায় প্রয়োজনীয় নাট-বল্টুও নেই। এ অবস্থায় বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে রেল লাইনে বাঁশ ও গাছের ডাল ব্যবহার করা হয়েছে। এতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। প্রায় ২ যুগ ধরে ত্রুটিপূর্ণ এই রেল ট্র্যাকে ট্রেন চলছে মন্থর গতিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেনের একজন চালক জানান, তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে চাই না। কিন্তু চাকরির স্বার্থে চালাতে বাধ্য হই।
রেল সেতুতে বাঁশের ফালি ও লাইনে গাছের ডাল লাগোনো সম্পর্কে জানতে চাইলে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, রেল লাইনে গাছের ডাল ও সেতুতে বাঁশ ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। আমরা সাধারণত বড় বা মেজর সেতুতে কাঠের স্লিপার যাতে স্থানচ্যুত না হয় সেজন্য লোহার পাত ব্যবহার করি। কিন্তু তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের সেতুগুলো মাইনর হওয়ায় সেগুলোতে বাঁশের ফালি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না যাওয়ায় আমরা স্থানীয়ভাবে এটা করেছি। তিনি রেল লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েক বছর ধরে এই পথে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করছে।
কুলাউড়া : রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে রেল লাইনে তিন থেকে ৩০০ ফুট দীর্ঘ ব্রিজও রয়েছে। এ সেকশনের ১৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে ২৫০টির বেশি ছোট-বড় ব্রিজ রয়েছে। প্রায় ৬০-৭০ বছর আগে নির্মিত এসব ব্রিজ একবারও পুনর্নির্মিত হয়নি। অধিকাংশ ব্রিজের কাঠের স্লিপারগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিপূর্বে কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর রেল ব্রিজে বাঁশ লাগানো নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর মনু রেল ব্রিজের বাঁশ অপসারণ করে সেতু মেরামত করা হলেও সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া রেল লাইনের অধিকাংশ ব্রিজে এখনও বাঁশ থেকেই গেছে। নতুন করে কিছু কিছু ব্রিজে বাঁশ লাগানো হচ্ছে।
সরেজমিন কুলাউড়া উপজেলার রেলের ২৯ ও ২৭ নম্বর সেতুতে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, রেলের কর্মীরা আশপাশ এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে তা ব্রিজের রেলের বাইরে ও ভেতরের কাঠের স্লিপারের সঙ্গে ক্লিপ মেরে চলে যায়। স্থানীয় লোকজনকে ব্রিজে লাগানো বাঁশ খেয়াল রাখার জন্যও বলে যায়। রেল ব্রিজে ত্রুটির কারণে সিলেট-চট্টগ্রাম ও সিলেট-ঢাকাগামী ট্রেন স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। এ ব্যাপারে কথা বলতে রেলওয়ে সিলেট ডিভিশনের সহকারী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাবনার সেই স্কুল ভবনে ক্লাস বন্ধের নির্দেশ : পাবনার সুজানগরে স্কুল ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের সন্ধান মেলায় সেখানে কোমলমতি শিশুদের ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মৌখিক নির্দেশে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নিয়ে বিকল্প কোথাও শিশুদের ক্লাস নেয়ার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ‘স্কুল ইন ইমারজেন্সি’ উইংকেও জানানো হয়েছে। শুক্রবার এ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরে সচিত্র রিপোর্ট ছাপা হলে প্রশাসন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুজানগর ইউএনওকে জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সালমা খাতুন জানান, প্রমাণ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুস সালাম জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। শিশুদের ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেয়া বন্ধ করে বিকল্প কোথাও ক্লাস নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.