মিনেসোটায় ২৯ বছর বয়সী জোহানা ওয়াটকিন্স তার স্বামী স্কটকে চুমু খেতে পারেন না। এমনকি স্বামীর সাথে এক ঘরে সময়ও কাটতে পারেন না তিনি। কারণ তার প্রায় সবকিছুর প্রতিই, এমনকি তার স্বামীর শরীরের গন্ধের ব্যাপারেও তার এক ধরনের এলার্জি আছে। অর্থাৎ তার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থায় এমন একটা সমস্যা আছে যে কারণে তিনি তার স্বামীর সাথে থাকতে পারেন না। এই এলার্জির নাম মাস্ট সেল এক্টিভেশন সিনড্রোম। একারণে জোহানা আর স্কটের দাম্পত্য জীবন অন্যদের চাইতে একেবারেই আলাদা। “ধরুন আমরা একটা সিনেমা দেখতে চাইলাম। কিন্তু সমস্যা হলো স্কট এবং আমি তো একটা ঘরে থাকতে পারি না। কারণ তার ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। তখন আমরা আলাদা আলাদা ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে বসি। এভাবেই আমরা একসাথে ছবি দেখি এবং একে অপরকে টেক্সট করে জানাই কার কেমন লাগছে,” বলেন জোহানা। জোহানা একাই একটি ঘরে থাকেন। ওই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ থাকে। বাতাস শোধনের জন্যে সেখানে একটি যন্ত্রও আছে। এই এলার্জি একেক মানুষের শরীরে একেক মাত্রায় থাকতে পারে। তারা বিয়ে করেছেন ২০১৩ সালে। কিন্ত বিয়ের আগে জোহানা ভাবতেও পারেন নি যে পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হতে পারে।
জোহানা ছিলেন শিক্ষক। একসাথে তারা হাইকিং এ যেতেন। তখনও তার শরীরে লাল লাল হয়ে ফুলে উঠত। পেটের ভেতরে অস্বস্তি হতো। মাথা ধরত। কিন্তু বিয়ের পর এসব অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।
‘তিন থেকে চার বছর আগে, ওর শরীরে এলার্জি ধরা পড়ার আগে, আমি যখন ওর খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হতাম, বিশেষ করে আমার মুখ যখন ওর মুখের কাছাকাছি যেত, তখনই সে কাশতে শুরু করত,’ বলেন স্বামী স্কট।
তিনি জানান, এ জন্যে তারা অনেক কিছুই একসাথে করতে পারেন না। এবং সেসব তাদেরকে মেনে নিতে হয়েছে।
কিন্তু তারা যে শারীরিকভাবে আর একসাথে বসবাস করতে পারছেন না সেটা তারা জানতে পেরেছেন মাত্র গত বছর।
‘আমরা দেখলাম যখন স্কট ঘরে আসত আমি খারাপ ফিল করতে শুরু করতাম। তারপর একদিন সে তার চুল কেটে ঘরে ঢুকলে দুই মিনিটের মধ্যেই আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। তখনই তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হলো। ‘
তার এক সপ্তাহ পর স্কট আবার তার স্ত্রীর সাথে দেখা করার চেষ্টা করল। কিন্তু তখনও ঘটল একই ঘটনা। তখন তারা বুঝতে পারল যে তাদের জীবনে নাটকীয় এক পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।
‘এর আগে আমার বাবা মা বা অন্য লোকজনের ব্যাপারে আমার এলার্জি ছিল। কিন্তু এটা যখন ওর ব্যাপারে হলো তখন সেটা খুব ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াল। ‘ এরপর তিনি যেসব চিকিৎসা নিয়েছেন তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তারা নিজেরাও জানেন না কখনও এই অবস্থার উন্নতি ঘটবে কিনা।
স্বামী স্কট বলেন, ‘এই সমস্যার সহজ কোনো সমাধান নেই। তবে আমি জোহানাকে নিরাপদ দেখতে চাই। এখন তার ব্যাপারে আমার যত্ন নেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে তার কাছে না যাওয়া। আমি ওর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্যে অপেক্ষা করব। ‘
জোহানা জানান, বাসর রাতেই তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবেন না। স্কট বলেছেন, কখনো কখনো তারা এই পরিস্থিতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কিম্বা হতাশ হয়ে যান। সূত্র : বিবিসি বাংলা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.