ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেট আছে ৩৬টি। এর মধ্যে ১২টি মার্কেট ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ ডিএনসিসির এক-তৃতীয়াংশ মার্কেট ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ভবন খালি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ভার কমাতে এবং ভবন ছাড়তে ব্যবসায়ীদের একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এসব ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ডিএনসিসি দায় নেবে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান ২ নম্বরে ডিএনসিসির নতুন নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন। ডিএনসিসির মার্কেট এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিষয়ে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাঁদের বসার অস্থায়ী বিকল্প ব্যবস্থা করে ভবন ভাঙার কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭টি এলাকায় মোট ১২টি মার্কেট ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এসব ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এর মধ্যে কতগুলো ভবন পুরোপুরি ভেঙে ফেলার, কতগুলোতে ‘রেট্রোফিটিং’ করার সুপারিশ করে বুয়েট। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর ভার কমাতে বলে বুয়েট। সুপারিশমতো ডিএনসিসি মার্কেটের ভার কমাতে এবং ভবন খালি করতে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে। মেয়র বলেন, ‘এসব মার্কেটে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা বলেছি, এসব ভবন রিস্কি, ছেড়ে দেন। ওনারা ছাড়েন না। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কেন দায় নেবে?’ ২ জানুয়ারি দিবাগত রাতের আগুনে ধসে পড়া গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচা মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল। ২০১৩ সালের বুয়েটের ওই প্রতিবেদনে গুলশান-১ কাঁচা মার্কেট সম্পর্কে বলা হয়েছিল, অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলা বানানো হয়েছে। মার্কেটের দোতলার দোকানগুলোতে ভার অনেক বেশি। জরুরি ভিত্তিতে মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভেঙে ফেলতে হবে। ভার কমাতে হবে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে বুয়েটের মূল্যায়ন, ভবনগুলোর বর্তমান অবস্থার ছবি তুলে ধরা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই ১২টি মার্কেট ভবন হচ্ছে গুলশান ২ নম্বর কাঁচা মার্কেট, গুলশান ২ নম্বর পাকা মার্কেট, খিলগাঁও কাঁচা (তালতলা) মার্কেট, খিলগাঁও সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজার আড়ত ভবন, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা মার্কেট, গাবতলীর প্রান্তিক সুপার মার্কেট ও আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল মার্কেট। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে ডিএনসিসির পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। স্বল্পমেয়াদি কোনো সমাধান নেই। কিছু ভবনে অবৈধভাবে তলা বাড়ানো হয়েছে, দোকান করা হয়েছে; সেগুলো ভেঙে দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উত্তর সিটি করপোরেশনের মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বসার অস্থায়ী ব্যবস্থা করে এসব মার্কেট ভাঙেন। মার্কেটে দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার ব্যবসায়ীরা নেব না।’ সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসি এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টিও তুলে ধরে হয়। জানানো হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১০ সালে ৩২১টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ১৪১টি ভবন ডিএনসিসি এলাকায়। মেয়র এসব ভবন খালি করতে ভবনমালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.