শার্ট, প্যান্ট, কোট পরে বেড়াতো ইমন। পাড়ায়-পাড়ায় ধান্দাবাজি ছিল পেশা। নিজেকে পরিচয় দিতো ডিবি কর্মকর্তা হিসেবে। কখনো কখনো পুলিশ বন্ধুদের ফোন দিতো নিজের মোবাইল থেকে। বলতো- ‘মামলা আছে-শেষ করে দিতে হবে।’ আর ডিবি’র পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতো বিভিন্ন অপরাধ আস্তানা থেকে। মূল কাজ ছিল মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়া। এভাবে গত কয়েক মাস ধরে সিলেট নগরীতে নিজেকে ডিবি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দাপট দেখিয়েছে ইমন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার। স্থানীয় লোকজন তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলেন। জানলেন সে ভুয়া ডিবি কর্মকর্তা। অবশেষে গতকাল সকালে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। সিলেট নগরীর বালুচর এলাকা। শহরের সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ এখন অনেকটা শহরও। গ্রামীণ পরিবেশও রয়েছে। কলোনি এলাকায় রয়েছে নিম্নবিত্তদের বাস। আর প্রতারণার জন্য ওই এলাকাকে বেছে নেয় ইমন। স্থানীয়রা জানান- কয়েক মাস আগে হঠাৎ করেই বালুচরে দেখা যায় ইমনকে। বিভিন্ন চায়ের দোকান, বাজারে বসে আড্ডা দেয়। আর নিজেকে পরিচয় দেয় ডিবি’র কর্মকর্তা হিসেবে। অনেটা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা, গুছিয়ে চলা সব কিছুই তার ডিবি’র মতো। চুলের কাটিংও পুলিশের মতো। এ কারণে ওই এলাকার সহজ-সরল মানুষ প্রথমে বিশ্বাস শুরু করেন ইমনকে। তারা বলেন- ইমনের সঙ্গে পুলিশের কোনো কোনো সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কারন- সে প্রায় সময়ই পুলিশকে ফোন করতো। তাদের সঙ্গে কথা বলতো। এ কারনে স্থানীয়রা তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। ডিবি ইমনের পুরো নাম রফিকুল ইসলাম ইমন। তার মূল বাড়ি কুমিল্লার রাজাবাড়ীর কান্দুঘর গ্রামে। পিতা মৃত রমিজ উদ্দিন। সিলেট নগরীতে তার কোনো স্থায়ী নিবাস নেই। সে একেক সময় একেক এলাকায় বসবাস করেছে। সর্বশেষ সে আস্তানা গড়েছিল নগরীর বালুচর এলাকায়। এর আগে সিলেট নগরীর মেডিকেল এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করে। ওই সব এলাকায় সে ছিনতাই সহ নানা অপরাধের ঘটনায় জড়িত ছিল। কিছুদিন সে পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করেছে। গতকাল পুলিশ তাকে আটকের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কিছু জিনিসপত্র পেয়েছে। এর মধ্যে ছিল সিল, প্যাড, জালিয়াতি করা বিভিন্ন মামলার কাগজপত্র। এসব জিনিস সে নিজেই তৈরি করতো। মামলার এজাহার, ওয়ারেন্ট তৈরিসহ নানা কাজে পারদর্শী ছিল। এ কারণে সে কৌশলে হাতিয়ে নিতো টাকা। গতকাল সিলেট নগরীর বালুচর এলাকায় জনতার হাতে আটকের পর ইমন নিজেও জানিয়েছে তার প্রতারণা কথা। ইমন স্থানীয় লোকজনের কাছে স্বীকার করেছে গত তিন মাস ধরে সে বালুচর এলাকায় বসবাস করছে। এবং ওই এলাকায় সে নিজেকে একজন ডিবি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছে। আর এই পরিচয়ে সে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। বালুচর এলাকার ফারুক মিয়ার কলোনির আবুল হোসেন জানিয়েছেন- প্রায় তিন মাস আগে একটি মামলা নিস্পত্তি করে দিবে বলে ইমন তিনির কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়নি। এমন টাকা নেয়ার পর সে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়। তিনি বিষয়টি এলাকার কয়েকজনকে জানিয়েছেন বলে জানানা। সাইফুল আলম নামে আরো একজনের কাছ থেকে সে প্রতারণা করে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে সে ওই টাকা আত্মসাৎ করে। বালুচর এলাকার তীর খেলার আস্তানা, মাদক ও জুয়ার আস্তানা, অসামাজিকতার স্থান থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করতো ইমন। এমনকি সে ওই সব এলাকায় নিয়মিত আস্তানা গড়েছিল। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে শেষদিকে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা ডিবি ইমন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। খবর নিয়ে তারা ইমনের পরিচয় ভুয়া জানতে পারেন। এদিকে, গতকাল সকালে ইমন নিজেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে বালুচর এলাকায় চাঁদাবাজি করছিলো। এ সময় স্থানীয়রা তাকে বিক্ষুব্ধ হয়ে আটক করে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টুকটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেনের কাছে। তিনি শাহ্পরান থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের শাহ্পরান থানার ওসি শাহজালাল মুন্সী মানবজমিনকে জানিয়েছে- গ্রেপ্তারের পর ইমন পুলিশের কাছে তার জালিয়াতির ঘটনা স্বীকার করেছে। সে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। আর প্রতারণা করতে সে জাল দলিল, স্ট্যাম্পসহ কাগজপত্র সঙ্গে রাখতো। পুলিশ তার কাছ থেকে এসব জিনিস উদ্ধার করেছে। প্রতারণা মামলায় ইমনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে- টুকটিকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন জানিয়েছেন, ইমনের প্রতারণায় স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ ছিল। সে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে। আটকের পর তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.