বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার ডাক নাম কমল। প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে বিএনপি। সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়া সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা নানা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের কাছে প্রথম পরিচিত হলেও পরে তিনি বাংলাদেশের একজন বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে রাজনৈতিক ঐকতানে নিয়ে আসা ও সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর কারণে তিনি আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে আখ্যা পান। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির সূচনা করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নতুন দর্শন উপস্থাপন করেন জিয়াউর রহমান। তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যান। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দেশের মানুষের প্রিয় দল হিসেবে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ’৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা যেমন এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছিল, তেমনি ’৭৫ সালে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যখন হুমকির মুখে, তখন সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন। তিনি একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে জিয়াউর রহমান চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের সূচনা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে সার্ক গঠনের উদ্যোগ তারই। ওআইসিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতি জোরদার করার জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসী অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে। মহান রাষ্ট্রনায়কের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা; গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়-বিচার ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হারানো মৌলিক ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই। তার প্রদর্শিত পথেই আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা বর্তমান ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাভূত করতে হবে। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনেই আমাদের জাতিসত্তার সঠিক স্বরূপটি আবিষ্কৃত হয়-যা আমাদের ভৌগোলিক জাতিসত্তার সুনির্দিষ্ট পরিচয় দান করে। বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের আত্মপরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও সাহসী অঙ্গীকার। কর্মসূচি: বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৮১তম জন্মবার্ষিকী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তার মধ্যে আজ সকাল ১০টায় জিয়াউর রহমানের শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়া, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দেশের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও বিভিন্ন ইউনিটগুলো স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.