তিনি লেজে কাটবেন, না মাথায় জানা নেই! তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সম্যক পরিচিতিও নেই বিশ্বের। হোয়াইট হাউসের গৃহপ্রবেশের আগে, স্বদেশেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের ঝড়। তাঁর প্রতিটি নীতিকে বঁটিতে কাটতে শুধু বিরোধী ডেমোক্রেটরা নয়, প্রস্তুত মার্কিন কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান সদস্য এবং মার্কিন সংবাদমাধ্যমও। তিনি অর্থাৎ ডনাল্ড ট্রাম্প। রাইসিনা সংলাপে চারদিন আগেই নরেন্দ্র মোদি মুখে বলেছেন বটে, এতদিন ধরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের যে ভিত তৈরি হয়েছে, ট্রাম্প যুগে তা এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হবে না। শপথ নেয়ার পরে ট্রাম্পকে টুইটারে শুভেচ্ছাও জানান তিনি। কিন্তু বাস্তব যে এতটা মসৃণ নয়, তা ঘরোয়াভাবে স্বীকার করছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা। তাঁদের সম্মিলিত মত হলো, সুকৌশলে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কিন নীতিকে বদলে এগোতে হবে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ‘বল টু বল’ খেলাটাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি কূটনৈতিক শিবিরের মত, অযথা গুটিয়ে না থেকে এবার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা সামনের পায়ে যেতে হবে সাউথ ব্লককে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘চীনের সঙ্গে ট্রাম্প যে পাল্লা দিতে চাইবেন, তা স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে তিনি ভারতকে পাশে চাইবেন সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, প্রবল শক্তিধর প্রতিবেশীকে অগ্রাহ্য করে কতদূর পর্যন্ত পাশে থাকতে পারবে ভারত।’ কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থা নিতে পারেন মোদি। অর্থাৎ ভারতের সম্ভাব্য আশঙ্কাগুলিকে (মার্কিন দেশে ভারতীয় পেশাদার স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা, এদেশ থেকে মার্কিন সংস্থাগুলিকে গুটিয়ে না নেয়া, এইচবি-ওয়ান ভিসা) নির্মূল করতে হবে ট্রাম্পকে। পরিবর্তে ভারতও ট্রাম্পের স্বার্থ দেখবে। মনমোহন জমানা থেকেই ভারত আমেরিকার দ্বিদলীয় সমর্থন জোগাড়ে সমর্থ হয়েছে। কাশ্মীর বিতর্কে নাক গলানো, পরমাণু পরীক্ষার জেরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখন ইতিহাস। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি দেখতে চাইছে, মার্কিন দেশে ট্রাম্প-বিরোধিতার স্বর কোন আকার নেয়। মার্কিন প্রেস করপারেশন ট্রাম্পকে খোলা চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে যে, তিনি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করছেন। আগামী দিনে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের যে লড়াই চলবে সে কথা খোলাখুলি বলা হয়েছে চিঠিতে। এই চাপ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ট্রাম্পকে দর কষাকষির টেবিলে বসানো অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। মার্কিন কংগ্রেসে এবার সব থেকে বেশিসংখ্যক (ছ’জন) মার্কিন বংশোদ্ভূত ভারতীয় জিতে এসেছেন। এই বিষয়টিকেও দু’দেশের সম্পর্কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মালয়ালি পরিবারের মেয়ে প্রমীলা জয়পাল যেমন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা জানান। শুধু তিনি একা নন, মার্কিন কংগ্রেসের মোট ৩৩ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য ওই অনুষ্ঠান বয়কট করবেন। আমেরিকায় এ ধরনের ঘটনা অভূতপূর্ব। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির রূপকার কূটনীতিক রণেন সেনের কথায়, ‘ট্রাম্প আসলে না রিপাবলিকান না ডেমোক্র্যাট! তিনি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি।’’ রণেন বাবুর মতে, এ হেন ‘স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব’র সঙ্গে খেলতে গেলে খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। মান্ধাতা আমলের কূটনৈতিক তত্ত্ব ঝেড়ে ফলে আশু দাবি আদায়ে এগোতে হবে। প্রাক্তন বিদেশ সচিব জি. পার্থসারথির মতে, ট্রাম্প আসায় কৌশলগতভাবে ভারতের লাভ বই ক্ষতি নেই। কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘প্রথমত ট্রাম্প সুকৌশলে রাশিয়াকে চীনের পিছনে লাগিয়েছেন। এর ফলে কিছুটা চাপে বেজিং। যা ভারতের জন্য ভালো। দ্বিতীয়ত ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো হওয়ায় এই জমানায় রাশিয়ার সঙ্গে নয়াদিল্লির বর্তমান তিক্ততা কেটে গিয়ে সম্পর্ক ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.