নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণ নিয়ে। কিন্তু সিরিজ শেষে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন তরুণ পেসাররাই। হতাশার নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি কামরুল-তাসকিনদের অসাধারণ বোলিং।
যা শেখা হলো নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন যতই পেস-সহায়ক হোক না কেন জায়গামতো বোলিং না করলে সফল হওয়ার সুযোগ নেই। এই পরীক্ষায় খুব একটা খারাপ করেননি বাংলাদেশের পেসাররা। গতি, মুভমেন্ট, বাউন্সারে টেস্ট সিরিজে কিউই ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তবে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় প্রাপ্তির ডালাটা পরিপূর্ণ হয়নি। এই অপ্রাপ্তি বেশ পোড়াচ্ছে তা সকিন আহমেদকে, ‘টেস্ট খেলার বহুদিনের স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। তবে দল টানা না হারলে ভালো লাগাটা পূর্ণতা পেত। নেতিবাচক দিকের মধ্যে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। প্রথম টেস্টের চেয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো বোলিং করেছি। গতির সঙ্গে সুইং করানোও শিখেছি।’ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে কামরুলের বোলিং। বাংলাদেশকে বেশ কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টেস্টে ভালো করলেও উন্নতির আরও সুযোগ দেখছেন কামরুল, ‘ব্রেক থ্রু এনে দেওয়াটা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করেছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যেখানে একটা উইকেট পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়, সেখানে টেস্টের শুরুতেই উইকেট! তবে টেস্ট খেলতে যে ধৈর্য লাগে সেটা আরও বাড়াতে হবে।’
ওয়ালশের ভূমিকা অক্টোবরে দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্পিন-সহায়ক উইকেটে পেস বোলারদের ভালো করার সুযোগ কমই ছিল। বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সত্যিকারের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ আসলে শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে। প্রথম বিদেশ সফরে শিষ্যদের সাফল্যে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি সন্তুষ্টই হওয়ার কথা। ওয়ালশের টোটকা কীভাবে কাজে লেগেছে সেটি বললেন কামরুল, ‘ওয়ালশ কখনো মেডেন ওভার দিতে বলেছেন। কখনো বলেছেন ব্যাটসম্যানদের হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এমন বোলিং করতে। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করেছি। তিনি মানুষ হিসেবেও অনেক বড়।’ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাফল্য পাওয়ার উপায়গুলো ভালোই জানা ওয়ালশের। টেস্ট ক্যারিয়ারের তাঁর সেরা বোলিংটা নিউজিল্যান্ডে। শুভাশিস রায় বললেন, ‘ওয়ালশ ওই কন্ডিশনে অনেক খেলেছেন। বেশ কবার ৫ উইকেটও পেয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলো তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন, যেটা আমাদের অনেক কাজে দিয়েছে।’
এবার ভিন্ন বাস্তবতা নিউজিল্যান্ড সফরে ভালো করার স্মৃতি সজীব থাকতেই ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন বাংলাদেশের পেসাররা। কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিয়মিত তিন পেসার নিয়ে খেলেছে। তবে আগামী মাসে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে যে সেটি হবে না, অনুমান করা কঠিন নয়। নিউজিল্যান্ডে ভালো করার পরও তাই ভারতের স্পিন-সহায়ক কন্ডিশনে একাদশের বাইরে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতা হবে কারও কারও। রুবেল অবশ্য এ বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন, ‘একাদশে দুজন পেসার হয়তো খেলবে। এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভালো। তবে যারাই সুযোগ পাবে ভালো খেলতে হবে।’ নিউজিল্যান্ডের পেস-সহায়ক কন্ডিশনে ভালো বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান, ২ টেস্টে নিয়েছেন ৬ উইকেট। ভারত সফরের আগে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের কাছ থেকে প্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন কামরুল, ‘সাকিব ভাইয়ের বোলিং দেখে আমার মনে হয়েছে যেখানেই খেলি না কেন, পরিশ্রম-প্রতিভা দিয়ে যেকোনো জায়গায় ভালো করা যেতে পারে।’ একাদশে ঠাঁই পাওয়া নিয়ে পেসারদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তাসকিন, ‘যদি বড় বোলার হতে চান উইকেট অনুযায়ী বোলিং করার সামর্থ্য থাকতে হবে। কোন কন্ডিশনে খেলা হবে সেটি নিয়ে তাই ভাবছি না।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.