গভীর রাতে ঘোরাফেরা করে একটি রহস্যময় নোহা গাড়ি। এই গাড়িতে থাকে ১০-১২ জনের মতো লোকও। তাদের সবার পরনে কালো রঙয়ের বিশেষ পোশাকও। তারা নিজেদের র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোক বলে পরিচয় দিচ্ছে। এ কারণে লোকজন ভয়ে তাদের ধারে-কাছে যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পর তাদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে পরদিন সকালেই তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। রাতেই তারা লুট করে নিয়ে গেছে স্থানীয় বাজারের একাধিক দোকানের সর্বস্ব। কক্সবাজার জেলার প্রতিটি উপজেলায় ঘুরছে এই চক্রটি। তবে মাঝে মধ্যে তারা মিউজিক গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা করে। জানা গেছে, চক্রটি গত একমাসে কক্সবাজার জেলার পাঁচ উপজেলার শতাধিক দোকান লুট করে নিয়ে গেছে। এসব দোকান থেকে প্রায় কোটি টাকা লুট করেছে। তবে আশঙ্কার কথা, এই প্রতারক অপরাধ চক্রটির দৌরাত্ম্য এখনো চলছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দোকানীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপরাধী চক্রটি গত ২০ দিনের ব্যবধানে মহেশখালীর পাঁচটি বাজারে হানা দিয়েছে। এসব বাজারের মধ্যে রয়েছে বড়মহেশখালীর নতুনবাজার, হোয়ানকের পানিরছড়াবাজার, কেরুনতলীবাজার, ছনখোলাপাড়া বাজার, ডেইল্যাঘোনা বাজার, কালারমারছড়ার আধাঁরঘোনা আনন্দ মার্কেট। এর মধ্যে পানিরছড়া, কেরুনতলী, ছনখোলাপাড়া বাজার, ডেইল্যাঘোনা বাজার, আঁধারঘোনা আনন্দ মার্কেটে একদিনেই হানা দিয়েছে। এর পাঁচদিন পরেই হানা দেয় নতুনবাজারে। চক্রটি এই পাঁচ বাজারের অন্তত ৩০টির বেশি দোকানের অন্তত ৩০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এই সময়ে মধ্যে চকরিয়ার বদরখালী বাজার, পেকুয়া কয়েকটি বাজার, উখিয়ার কোটবাজার, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওবাজারের ৭০টি দোকানের ৬০ লাখের বেশি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে দোকানের তালা ভেঙে সহজে লুট করে সর্বস্ব। স্থানীয় লোকজন জানান, চক্রটি অধিকাংশ সময় একটি কালো রংয়ের নোহা গাড়ি ঘোরাফেরা করে। রাত ১১ থেকে ১২টার পর থেকে তারা বিচরণ করে। টার্গেটকৃত বাজারের মূল পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে থাকে। এ সময় বাজার পরিচালনা কমিটির লোকজনসহ কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের বেশির ভাগ সময় র্যাবের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছে। অনেক্ষ ক্ষেত্রে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোক বলেও পরিচয় দিচ্ছে। তারা মিশনে নামেন রাত ২টার পর। মহেশখালীর নতুনবাজার বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজ বাশি জানান, চক্রটি এক রাতেই নতুনবাজারের ১৩টি দোকান লুট করে নিয়ে গেছে। তারা শুধু দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকাই নিয়ে গেছে। কোনো মালামাল নিয়ে যায়নি। ধাতু ব্যবহার করে তালা ভেঙেই টাকা লুট করা হয়েছে। হোয়ানক টাইমবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম জানান, ১৫ই জানুয়ারি রাত ২টার দিকে রহস্যময় নোহা গাড়িটি টাইমবাজারে অবস্থান করে। বাজারের পাহারাদার তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের র্যাবের লোক বলে জানান। আরো জানান, তারা আসামি ধরতে বিশেষ অভিযানে এসেছেন। তবে পাহারাদারের সন্দেহ হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বণিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিমসহ আশেপাশের ব্যবসায়ীদের ডেকে তুলেন। সবাই এগিয়ে এলে দ্রুত পালিয়ে উত্তর দিকে চলে যায় নোহাটি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) নাজমুল কামাল বলেন, অভিনব পন্থায় বাজারের দোকান লুটের ঘটনা আমরা জেনেছি। তবে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’ র্যাব-৭ এর কক্সবাজার ক্যাম্পের লে. কমান্ডার আশেকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এখন জানলাম। যে কেউ, যেখানে, যে কোনো সময় যদি ওই চক্রের সন্ধান পান তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানান। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে যাবো।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.