সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অসদাচরণ তদন্ত ও প্রমাণে তিন সদস্যের একটি ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ কমিটি গঠনের বিধান রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তদন্তে কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য প্রমাণিত হলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে, সেটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। সোমবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য (তদন্ত) আইন, ২০১৬’র নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ তথ্য জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ আইনের খসড়ার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হলেও সর্বোচ্চ আদালত এ ব্যাপারে কোনো মতামত দেয়নি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের দায়বদ্ধতা থেকে এ আইন করা হচ্ছে। মূলত বিচারপতিদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের বিষয়টি আইনে রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তার তদন্ত হবে এ আইনের মাধ্যমে।তিনি বলেন, রাজনীতি বিদ্বেষপ্রসূত কোনো বিষয় নয়। বিচারক হয়েও যদি অবিচারকসুলভ কাজ করেন, তার তদন্ত হবে। কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করলে খসড়া আইনে দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে বলেও জানান সচিব।
তিনি বলেন, বিচারপতিদের যেন কোনো অসম্মান না হয়- সেই সুরক্ষা আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিচারপতিদের সাথে আলোচনার সুযোগ রয়েছে, এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইনটি মন্ত্রিসভায় আসবে। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে ২০১৪ সালের ১৮ অগাস্ট সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিল সংসদে পাস হয়। এর ফলে ‘অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারকের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে যায়, যে ক্ষমতা স্বাধীনতার পর চার বছর পর্যন্ত আইন প্রণেতাদের হাতে ছিল। উচ্চ আদালতের অপসারণ প্রক্রিয়া কী হবে, তা ঠিক করে আইন কমিশন গত মার্চে নতুন এই আইনের খসড়া তৈরি করে।
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় উচ্চ আদালতের বিচারকদের পদের মেয়াদ নির্ধারণ ও তাদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। ২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.