ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীকে স্বাধীনতার চেতনা ও উন্নয়ন বিরোধী অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে আওয়ামী লীগ প্রধান এ আহ্বান জানান। রোববার ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। একাত্তরের এদিনে মেহেরপুরের তৎকালীন বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমানে মুজিবনগর) স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। গত সাত বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বৈদেশিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ০৫। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত এবং বিএনপি নেত্রী ও তার পরিবারকে দুর্নীতি মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য রাজনীতির নামে জঙ্গি স্টাইলে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। দেশব্যাপী নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্বাধীনতার চেতনা ও উন্নয়ন বিরোধী এ অপরাজনীতির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ অনুমোদন করা হয়। সেদিন থেকে এ স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে, জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।’
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন এই সরকারের দক্ষ পরিচালনায় দীর্ঘ নয় মাস স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শ্রেণি-পেশার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্রশক্তির সহায়তায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আড়াই মাসের ব্যবধানে ৩ নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ৪ নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর ২১ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল না। আইনের শাসন ও জনগণের অধিকার সামরিক স্বৈরাচারের বুটের তলায় পিষ্ট হচ্ছিল। ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠনের পর দেশে আবারও ফিরে আসে গণতন্ত্র।’
প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এ ছাড়াও, তিনি সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জাতির পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি দায়মুক্ত হচ্ছে। জেলখানায় নিহত ৪ জাতীয় নেতা হত্যা মামলার বিচার করা হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে বলেও বাণীতে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.