বরগুনা সদর উপজেলার গোলবুনিয়া গ্রামের ১২ বছর বয়সী কিশোরী হাসি। সে স্থানীয় কালিরতবক দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম মো. আবুল হাওলাদার (৬৫), পেশায় রিকশাচালক। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে কিশোরীর সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি দেখিয়েই আবার তাকে যৌন নির্যাতন চালাত এক বখাটে যুবক। একান্ত সেই ছবিটি আবার হাতবদল হয়ে পৌঁছে যায় যুবকের বন্ধুদের কাছে। সঙ্গে হাতবদল হয় হাসিও! দিনের পর দিন বাড়তে থাকে যৌন নির্যাতনের মাত্রা। একপর্যায়ে যৌন সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় একদিন ওই ছেলেরা সেই ছবিটি সারা গ্রামে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় বার বার বখাটেদের যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২৯শে আগস্ট রাতে ঘরের আঁড়ার সঙ্গে দড়িতে ঝুলে আত্মহত্যা করে হাসি। অভিযুক্ত ইছা ও নয়ন বর্তমানে পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে এবং অপর যুবক সুমন পলাতক। গতকাল তাদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির রাস্তার পাশে হাসির কবরের পাশে বসে কাঁদছেন বাবা আবুল হাওলাদার। প্রতিবেদককে দেখে তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত কান্নার তোড়ে আর কথাই বলতে পারেননি বয়োবৃদ্ধ আবুল হাওলাদার। স্বজনরা জানান, সন্তানদের মধ্যে সবার ছোট হাসিকে খুব ভালোবাসতেন আবুল। আর হাসির আত্মহত্যার পর খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছেন তিনি। হাসির বাবা-মা ও স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্র রিকশাচালকের মেয়ে হাসির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। গ্রামের কালির তবক দাখিল মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত সে। এরই মধ্যে থেমে গেছে তার জীবন। এতটুকু বয়সে নির্মম যৌন হয়রানি আর নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে তাকে। গত ২৯শে আগস্ট রাতে আত্মহত্যার পরে ময়নাতদন্ত আর দাফনের মধ্য দিয়ে চাপা পড়ে গেছে হাসির সকল না বলা যন্ত্রণা। একই গ্রামের বরগুনা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মো. ইব্রাহীম সিকদারের ছেলে মো. ইমাম হোসেন ইছা (১৯) প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত হাসিকে। হাসির খালাতো বোন করিমা জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে, কখনো বা বাড়ির পাশের সেতুতে দাঁড়িয়ে হাসিকে প্রেমের প্রস্তাব দিত ইছা। এক সময় ইছার প্রেমের ফাঁদে পা দেয় হাসি। এরপর একদিন বিকালে বাড়ির পাশের একটি নির্জন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ইছার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ইছার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ছবি তোলে হাসি। পরে সেই ছবি ফাঁস করে দেয়ার কথা বলে প্রায়ই হাসিকে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন করতে থাকে ইছা। একদিন ইছার মোবাইল থেকে সেই ছবি চুরি করে নেয় ইছার বন্ধু একই গ্রামের মো. লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়ন (১৬)। এবার দরিদ্র কিশোরী হাসিকে মেনে নিতে হয় বখাটে নয়নের সকল অনৈতিক ‘আবদারও’! ছবি ফাঁস করে দেয়ার কথা বলে নয়নও প্রায়ই হাসিকে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন করত। এ কথা ইছাকে জানালে সে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে উল্টো নয়নের কাজে সায় দেয়। এতে মন ভেঙ্গে যায় হাসির। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আবার হাতবদল হয় মোবাইল ফোনের সেই ছবি। ছবির সঙ্গে সঙ্গে আবারও হাতবদল হতে হয় হাসিকে। এবার হাসির জীবনে আসে তৃতীয় যুবক একই গ্রামের মো. মাহতাব আকনের ছেলে সুমন (১৭)। সুমনও ইছা এবং নয়নের বন্ধু ও সহযোগী। সেও ফাঁদে ফেলে হাসিকে যৌন নির্যাতন করে। এ অবস্থায় বার বার বখাটেদের যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে ঘরের আঁড়ার সঙ্গে দড়িতে ঝুলে আত্মহত্যা করে হাসি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.