প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার প্রমাণ করেছে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সক্ষম। তবে, জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় দেশের মানুষের আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। দেশের চলমান জঙ্গি-সন্ত্রাসের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাস এদেরই সৃষ্টি। যখনই কেউ ধরা পড়ে, একটু খোঁজ-খবর নিতেই দেখা যায়, তাদের সবার গোড়া এক। দেখা যায়, তারা রাজাকার ও আলবদরের দোসর। সোমবার ধানমণ্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের সড়কে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলেছে। এখনও চলছে। তবে দেশের মানুষ সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়নি; যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত জীবন উপহার দেয়া। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি, এগিয়ে চলছি; এগিয়ে যাব। মানুষের দুঃখ থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সক্ষম তা প্রমাণ করেছি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় বড় দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ঘটছে। তাদের চেয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এসব জঙ্গি-সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। ১৫ আগস্ট কাল রাতের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের চরিত্র হননের ঘৃণ্য চেষ্টা করেছিল জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপি। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ২১ বছর আমাদের প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। ’৯৬-তে আমরা ক্ষমতায় এসে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরি। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পরে যে বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি, রাস্তায় বসে মিলাদ পড়তে হয়েছে। সেই বাড়ি আমাকে হস্তান্তর করার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে যায়। ‘আইনজীবীর মাধ্যমে বাড়ি বুঝে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। তখন বুঝতে পারিনি তাদের তাড়া কেন!’ ‘বাড়ি হস্তান্তর করার পরে ৪০ দিন ধরে টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে ওই বাড়িতে হীরা, মুক্তা, টাকা পাওয়া গেছে। আর জিয়া একটি ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া জামা রেখে গেছে। ১শ’ টাকার নোট বঙ্গবন্ধু বন্ধ করেছিলেন। সেই নোট ট্রাংক ভরে এনে দেখিয়েছিল যে এসব পাওয়া গেছে ওই বাড়িতে। ‘কিন্তু বাংলার মানুষ এসব বিশ্বাস করেনি। কারণ দেশকে কে কতটুকু দিয়েছে তা মানুষ জানে। তিনি বলেন, কৃত্রিমভাবে চরিত্র তৈরি করে সত্য চাপা দেয়া যায় না। আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কয়েক প্রজন্ম জানতেই পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ৭ মার্চের ভাষণ তারা শুনতে পেয়েছে। সঠিক ইতিহাস জানতে পেরেছে। এখন মানুষ অনেক সতর্ক। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। চাইলেই আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। বাংলার মানুষের মন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র আর সফল হবে না বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মা-বাবা, ভাই-বোন হারিয়েছি, কিন্তু লক্ষ-কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলাম। যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন, সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই। এজন্য প্রয়োজনে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত। রক্তদান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.