বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আসছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি হবে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে নিু মাধ্যমিক বা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দেশে অনুমোদন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে দেয়া হবে না। এবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির পর দেখা গেছে, প্রায় ৭ লাখ আসন শূন্য আছে। এটা প্রমাণ করে, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এছাড়া বিভিন্ন সমীক্ষায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মনে করেন।
সূত্র জানায়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে কোনো ব্যক্তি সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া হাইস্কুল বা নবম-দশম শ্রেণী পর্যায়ের স্কুল, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর মানের কলেজ এবং নবম-দশম শ্রেণীর মানের দাখিল ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর মানের আলিম মাদ্রাসা স্থাপন করতে পারবেন না।
যদি পাহাড়ি এলাকা, চর ও দুর্গম অঞ্চলসহ কোথাও একান্ত প্রয়োজন হয়, তবে তা সরকার স্থাপন করবে। যদি এ ধরনের অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে কেউ স্থাপন করতে চায়, তাহলে সরকারের কাছে আবেদন করবে।
সরকারের নির্দিষ্ট কমিটি আগে সরেজমিন পরিদর্শন ও অনুসন্ধান চালাবে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে। শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি পাচ্ছে কিনা, নিু মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলের ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ইস্যুতে এ সভা ছিল।
এতে বলা হয়, নিু মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা এখন থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে। বাকি প্রশাসনিক কাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সম্পন্ন হলেও ধীরে ধীরে তাও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হবে। এতে বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা এলাকায় প্রয়োজন বা প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাই প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। সভায় বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে এবং অনুমোদনের জন্য পাইপলাইনে আছে, সেসব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে।
বোর্ডগুলো এসবের অনুমোদন দেবে না। আর রোববারের বৈঠকের পর আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হলে তার অনুমোদন দেয়া হবে না। বৈঠকে এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী এরই মধ্যে ভেবেচিন্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার জন্য এক মাস ধরে বিভিন্ন ফাইল নোটে ও মৌখিকভাবে অনুশাসন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আজকের সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া আর কোনো স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে নির্দেশনা সংবলিত সার্কুলার শিগগিরই জারি করা হবে। তিনি আরও বলেন, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যবস্থাপনা এখন এক জায়গা থেকে পরিচালিত হবে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ একটি কমিটি থাকবে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে ব্যক্তিপর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়। দুই-তিন বছর পর বোর্ডে প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। পর্যায়ক্রমে তা অধিভুক্তি পায়। মন্ত্রণালয়ের আজকের (রোববার) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে এ রেওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে। কোথাও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.