চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির কথিত স্বামী শাহরিয়ার ইসলাম শাওনের সঙ্গে ‘বিয়ের কাবিননামা’ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলামের আদালতে শাওনের আইনজীবী বেলাল হোসেন এ কাবিননামা দাখিল করেন।
কাবিননামায় মাহির নাম শারমীন আক্তার নিপা ওরফে মাহিয়া দেওয়া হয়েছে। এতে চার লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্য করা হয়। বিয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছে ২০১৫ সালের ১৫ মে।
শাওনের আইনজীবী বেলাল হোসেন জামিন শুনানিতে বলেন, মাহি নিজেই অপরাধ করেছেন। তথ্য গোপন করে গত ২৫ মে সিলেটের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারায় অপরাধ। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামি তাঁর বন্ধু হওয়ায় বিয়ের আগে তাঁর কাছে কিছু ছবি ছিল, তাই ছবিগুলো প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু মূল কথা হলো গত বছরের ১৫ মে শাওনের সঙ্গে মাহির বিয়ে হয়। এখনো ওই বিয়ে বলবৎ রয়েছে। একটি বিয়ে বলবৎ থাকায় আরেকটি বিয়ে হয় না। তাই শাওনের বিয়ে অবৈধ নয়।
প্রতি-উত্তরে বিচারক বলেন, ‘আমার আদালতে জামিন শুনানির এখতিয়ার নেই। আমি শুধু রিমান্ডের আদেশ দেব।’ পরে বিচারক রিমান্ডের আবেদন খারিজ করে দেন।
এর আগে এক দফা রিমান্ড আজ দুপুরে পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে শাওনকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায়।
শাওনকে রিমান্ড আবেদনে যা ছিল : আসামি শাহরিয়ার ইসলাম শাওনকে (২৩) পুলিশ রিমান্ড শেষে আপনার আদালতে পাঠিয়ে এই প্রতিবেদন দাখিল করছি যে এই আসামি পূর্বপরিচয়ের সুবাদে বাদীর সঙ্গে কিছু অন্তরঙ্গ স্থিরচিত্র থাকায় হিংসাপরায়ণ হয়ে বাদীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হরণসহ বিবাহ ভেঙে ফেলার অসৎ উদ্দেশ্যে বাদীর নিজস্ব কিছু অন্তরঙ্গ স্থিরচিত্র তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আইডি শাহরিয়ার, হাসনাইন রাজু, খাদেমুল ইসলাম, আলামিন ইসলামের মাধ্যমে এবং মিডিয়াপল্লি ডট কম ও বিএননিউজ২৪.ইনফোগুলোতে ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে দিয়েছে মর্মে জানা যাচ্ছে।
এই আসামি একজন চতুর সাইবার প্রযুক্তি দক্ষ লোক। সাইবার প্রযুক্তির মাধ্যমে এই আসামি তার সহযোগীদের যোগসাজশে বিভিন্ন প্রযুক্তি যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে এই অপকর্ম করেছে। এই আসামিকে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য, তার সহযোগীদের শনাক্তকরণ, অপরাধে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অস্ত্র উদ্ধার, উক্ত ভাইরাল নিউজ অনলাইন হতে ছড়ানোর মাধ্যমে বাদীকে সামাজিকভাবে হেয় করা, বিবাহ ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে রক্ষাসহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির পুনরায় সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডের জরুরি প্রয়োজন।
এদিকে আদালতে বিয়ের কাবিননামা দাখিলের পর চিত্রনায়িকা মাহির বক্তব্য জানতে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন নায়িকা মাহি। অভিযোগটি তিনি করেন কথিত প্রেমিক ও স্বামী শাওনের বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত রোববার শাওনকে দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় শাওনের কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কথিত স্বামী শাওনের বাসা থেকে তাঁর কম্পিউটার জব্দ করেছি। সেখানে কিছু ছবি পেয়েছি, যা জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে শাওন স্বীকার করেছে যে সে নিজেই এই ছবিগুলো ফেসবুকে আপ করেছিল।’
মাহির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে কি না, এমন কোনো প্রমাণ শাওন দাখিল করেছেন কি না জানতে চাইলে ওই ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’
ঢাকাই ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুর বিয়ের পরদিন থেকেই কয়েকটি গণমাধ্যমে মাহির একাধিক বিয়ে-সংক্রান্ত কিছু ছবি প্রকাশ হতে থাকে। সেখানে ছবি প্রকাশের পাশাপাশি দাবি করা হয়, এর আগেও একাধিকবার মাহির বিয়ে হয়েছে।
ছবি প্রকাশের পর থেকে আলোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নজরে এলে নায়িকা মাহি বলেন, তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার সংসার ভাঙার জন্য কেউ আমার পিছু লেগেছে।’
গ্রেপ্তার হওয়া শাওন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শাওন দাবি করেন, নায়িকা মাহি তাঁর ভালো বন্ধু ছিলেন। ফেসবুকে মাহির সঙ্গে অনেক ছবিও পোস্ট করেন শাওন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.