উচ্চ মাধ্যমিকের সব বইয়ের দাম ১৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রকাশকদের দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে আগে যে বইয়ের দাম ছিল ১০০ টাকা, এখন তা ১১৫ টাকায় কিনতে হবে। এর মধ্য দিয়ে গত দেড় মাস ধরে চলা জটিলতার অবসান হলেও ১০ জুলাই একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের হাতে বই যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষ করে বাংলা, ইংরেজি ও বাংলা সহপাঠের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হবে। কেননা, এ তিন বইয়ের নিরাপত্তা কাগজ (যাতে নকল না হয়) এনসিটিবি সরবরাহ করে। এখন পর্যন্ত কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা সরবরাহ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, বইয়ের নতুন নির্ধারিত দাম এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের সব বইয়ের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, বাজার দর এবং অন্যান্য খরচ বিবেচনা করে ১৫ শতাংশ হারে প্রত্যেক বইয়ের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগের তুলনায় কাগজ, কালিসহ মুদ্রণ উপকরণের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। বাকি ৫ শতাংশ মার্কেটিং কস্ট বাবদ। এ দু’খাত মিলিয়ে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। একটি কমিটির মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের আগেই উচ্চ মাধ্যমিকের বই বাজারে ছাড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। উচ্চ মাধ্যমিকে বর্তমানে পাঠ্যবই ৬৩টি। এসব বই বেসরকারি প্রকাশকরা ছেপে বাজারজাত করেন। এর মধ্যে বাংলা সাহিত্য, বাংলা সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) এবং ইংরেজি প্রথমপত্র (ইংলিশ ফর টুডে)- এ তিনটি বই সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকারের পক্ষে এগুলো এনসিটিবি নিজস্ব লেখক দিয়ে লিখিয়ে পাণ্ডুলিপি বেসরকারি প্রকাশকদের মাধ্যমে ছাপিয়ে বাজারজাত করে। এর বিনিময়ে সরকার রয়্যালটি হিসেবে অর্থ নেয়। বাকি ৩০টি বিষয়ের ৬০টি বই বেসরকারি প্রকাশকরা তাদের লেখক দিয়ে রচনা করেন। অবশ্য কারিকুলাম ঠিক করে দেয় এনসিটিবি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর এসএসসি পাস করা ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির আবেদন করেছে। শনিবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গতবছর একাদশে ভর্তি হয়েছে ১২ লাখের বেশি, যারা এখন দ্বিতীয় বর্ষে উঠবে। সেই হিসাবে ৩০টি বিষয়ের ৬০টি বইয়ের ক্রেতা অন্তত ২৫ লাখ শিক্ষার্থী। আর সরকারি তিনটি বইয়ের ক্রেতা এবারের ভর্তিচ্ছু ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। প্রতিটি বইয়ের দাম ১৫ টাকা করে বেশি হলে এ খাতে শিক্ষার্থীদের গত বছরের তুলনায় বাড়তি খরচ হবে অন্তত ৩৮ কোটি টাকা। জানা গেছে, ৬৩টি বইয়ের দামই সরকার গত ৩ বছরের মধ্যে একদফা বাড়িয়েছে। এর মধ্যে সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন ৩টির দাম দু’বছর আগে একদফা বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের জুনের আগে বাংলা বইয়ের দাম ছিল ৪৫ টাকা। এটা তখন ১২৬ শতাংশ দাম বাড়িয়ে রাখা হয়েছিল ১০২ টাকা। ইংরেজি বইয়ের দাম ছিল ৬৮ টাকা, যা বাড়িয়ে ৯০ টাকা করা হয়। বাংলা সহপাঠের মূল্য ৪৭ টাকা। এটির দাম আগে কম ছিল। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ তিনটি বইয়ের বাজারজাত কার্যক্রম ২০১৪ সালের আগে সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নানা জটিলতা ও লোকসানের কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অফারিং পদ্ধতিতে ১৭ জন প্রকাশকের মাধ্যমে বাজারজাত করা হচ্ছে। চলতি বছর এ তিন বইয়ের দাম যাতে বাড়ানো হয়, সেজন্য প্রকাশকরা সিন্ডিকেট করেন। বইয়ের টেন্ডার আহ্বান করা হলে ১১৩টি সিডিউল বিক্রি হয়। কিন্তু মাত্র ১টি জমা পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত বইয়ের দাম বাড়ানোর জন্যই এমন সিন্ডিকেট করা হয়। অপরদিকে ২০১৩ সালে বাকি ৬০টি বইয়ের দাম একদফা বাড়ানো হয়েছিল। ওই বছর এসব বই নতুন কারিকুলামের অধীনে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। তবে বইয়ের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে খুশি নন প্রকাশকরা। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাবেক পরিচালক ও পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল বলেন, ৩ বছর আগে এসব বইয়ের দাম একবার নির্ধারণ করা হয়। সেই তুলনায় বর্তমানে কাগজ, কালিসহ মুদ্রণ উপকরণের দাম, শ্রমিক মজুরি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির বিল দ্বিগুণ হয়েছে। আমরা মাত্র ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানোর দাবি করেছিলাম। ২৫ শতাংশ বাড়ানো হলেও তা যৌক্তিক হতো। যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে আমাদের ব্যবসায়িক সাফল্য আসবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.