ছেলেকে যখন খুঁজছিলাম তখন ওরাও আমাদের সঙ্গে ছিল। ওদের দোকানের মাইকেই প্রচার করা হয়েছে আমার ছেলের নিখোঁজ সংবাদ। এমনকি জানাজাতেও অংশ নেয় ওরা। অথচ তারাই যে আমার ছেলের খুনি তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।’
নিহত শিশু ফাহিম আহমেদের (৮) মা ফায়জুন্নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন এসব কথা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী এলাকায় নানা হাজি মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে থাকত ফাহিম ও তার মা ফায়জুন্নাহার। ফাহিমের বাবা মনিরুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী।
গত ১৪ জুন থেকে নিখোঁজ ছিল ফাহিম। পরেরদিন সন্ধ্যায় কুশখালীর সীমান্ত এলাকার পাটক্ষেত থেকে ফাহিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ফাহিমের প্রতিবেশী সফুরা খাতুন ও তাঁর দুই ছেলে ইব্রাহিম ও ইসমাইল হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিনজনই ফাহিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
ফায়জুন্নাহার বলেন, ‘সেদিন দুপুরে বাজার থেকে মুরগির মাংস কিনে এনে রান্না করে খেয়েছিল তারা (সফুরা ও তার ছেলেরা) যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে গরুর মাংস হারিয়ে যাওয়ায় তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।’
ফায়জুন্নাহার আরো বলেন ‘আমার ছেলের পায়ের এক জোড়া স্যান্ডেল তারা আমার বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসে। সেখান থেকেই সন্দেহ হয়। পরে তারা ধরা পড়ল পুলিশের হাতে।’
ফায়জুন্নাহার জানান, বেলা ১১টার দিকে ফাহিম তার বন্ধু আসিফসহ কয়েক জনের সাথে কুশখালি বিজিবি ক্যাম্পের কাছে একটি গাছে পাখির ছানা ধরতে যায়। ভরদুপুরে গাছে উঠতে মানা করে বিজিবি সদস্যরা। ফাহিমের এলাকার এক যুবক যুবক অন্যদের ও ফাহিমকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ সময় মামুনের সামনেই মুজিবর রহমানের ছেলে ইসরাফিল হোসেন ফাহিমকে ডেকে নিয়ে আসে বাড়িতে। জিজ্ঞেস করে সে মাংসের প্যাকেট কোথায়। ফাহিম জানায়, বাড়িতে কাউকে না পেয়ে ভ্যানের ওপর রেখে পাখি ধরতে গিয়েছিলাম। এ কথা শুনেই ইসরাফিলের মা সফুরা খাতুন ফাহিমের পেটে লাথি মেরে চিৎকার করে বলে ‘তোর গোশত কুকুর দিয়ে খাওয়াব।’ ফাহিম লাথি ও ভ্যানের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তাকে তারা ঘরে নিয়ে যায়। নানাভাবে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে এবং রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করে। এর পর তাকে বৈদ্যুতিক শক দেয় । পরে ফাহিম মারা যায়।
ফাহিমের নানা হাজি মোহাম্মদ আলী জানান, ইসরাফিলের স্ত্রী তামান্না খাতুন এ সবকিছুর প্রত্যক্ষদর্শী। তামান্না তাঁর বাবার বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি আর এ বাড়িতে থাকবেন না। এরা এক কেজি মাংসের জন্য একটি শিশুকে মেরে ফেলেছে। তামান্নার এ কথা এখন কুশখালি গ্রামের সবাই জানে।
ফাহিমের নানি ফরিদা খাতুন বলেন, ‘ভোরে গ্রামের হযরত আলী ইব্রাহীম ও ইসরাফিলকে দেখেছে খালি ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতে।ওদের বাড়িতে ছিল নিহত ফাহিমের স্যান্ডেল। ছোট্ট শিশু আলিমকে দিয়ে স্যান্ডেলটি বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।’ তখন থেকেই মুজিবরের পরিবারের প্রতি সন্দেহ হচ্ছিল বলে জানালেন তিনি।
ফায়জুন্নাহার জানান, ছোট্ট ফাহিম কুশখালির হেফজখানায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। ওর বয়স যখন ২৪ দিন তখন ওর বাবা মনিরুল ওকে ওর রেখে মালয়েশিয়া চলে যান। এখন ওর বয়স আট বছর । ওর বাবা ওকে বড় হলে আর দেখেনি। এখন তিনি বাড়ি আসবেন। ফায়জুন্নাহার বলেন, ‘তাকে কি জবাব দেব আমি।’ বলেই কেঁদে ফেলেন ফাহিমের মা ফায়জুন। ফায়জুনের মেয়ে মিম মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
আজ সোমবার সকালে ফাহিমের মা ফায়জুন্নাহার ,নানা হাজি মোহাম্মদ আলী, নানি ফরিদা খাতুন, চাচা সিদ্দিক আলী , ফুফু শামসুন্নাহার ও আত্মীয় ফারজানা জান্নাত সাতক্ষীরা এসেছিলেন ফাহিম হত্যার বিচার চাইতে।
এই প্রতিবেদককে তাঁরা বলেন, ‘ওরা নৃশংস। ফাহিমকে খুন করে লাশ ঘরে রেখে ওরা খাবার খেয়েছে। ফাহিমকে খুঁজতে তারা আমাদের সাথে ঘোরাঘুরি করে। এমনকি তার জানাজায়ও যোগ দেয় তারা।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.