নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ভর্তি ইচ্ছুক নতুন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দেশিকা ও ভর্তি ফরমের নামে আদায় করা হচ্ছে এই টাকা।
ভর্তি বাণিজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা রশিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে এ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়কের নির্দেশে অতিরিক্ত এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে নেই বলে স্বীকার করলেও বাংলাদেশের সব কলেজেই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন সংখ্যা দুই হাজার ৩৫০। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪১০টি, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এক হাজার ১২০টি ও মানবিক বিভাগে ৮২০টি আসন রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের মাধ্যমে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিধিমালা অনুযায়ী মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি কমিটির কাছ থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে। পরে কলেজের নির্ধারিত ফি মোবাইল ব্যাকিং শিওর ক্যাশের মাধ্যমে জমা দেয়। শিওর ক্যাশের আইডি নম্বর দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কলেজ ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়ে শ্রেণি রোল নম্বর সংগ্রহ করে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দুই হাজার ৩১৭ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের দুই হাজার ২১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে ভর্তি হতে গেলে আলাদাভাবে ক্যাশ কাউন্টারে ১০০ টাকা জমা দিয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা বোর্ডের ভর্তি নির্দেশনা পরিপন্থী।
কলেজের দেয়ালে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের ক্যাশ কাউন্টারে ১০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হলেও এতে অধ্যক্ষের কোনো স্বাক্ষর নেই।
ভর্তি হতে আসা মিতু আক্তার জানায়, ‘১০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ কেটে ফরম কিনেছি। পরে কলেজের নির্ধারিত টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে জমা দিয়েছি।’ নরসিংদী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আতিকুর রহমান জানায়, ‘আমরা গত বছর এই অতিরিক্ত ফি দেইনি। এবার কী কারণে অতিরিক্ত ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। অধ্যক্ষ স্যারের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে তিনি আমাদের কোনো কথা শুনতে রাজি হননি।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভর্তির ফরম ও কলেজের প্রসপেক্টাসের (নির্দেশিকা) জন্য এই ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর বিষয়টি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নির্দেশিকা ও ফরম বাবদ এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সব কলেজেই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।’
তবে এই অর্থ আদায়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ না থাকায় এটা বিধি বহির্ভূত। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে অধ্যক্ষ বিব্রত হবেন বলে সাংবাদিকদের সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.