যাদের জীবনের কোনো চাহিদা অপূর্ণ নয়, সমাজের সেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কেন সন্ত্রাসবাদের পথে পা বাড়াচ্ছে, কোন মানসিক অবস্থায় পড়ে তারা খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে তা খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে সমাজের এই এলিট শ্রেণির অংশগ্রহণ বাংলাদেশের প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা এগুলি করছে, তারা ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে। তারা এখন বেহেস্তের হুরপরি পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটা কোন ধরনের অদ্ভূত একটা চিন্তা-ভাবনা!’
আজ রোববার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১তম ‘এশিয়া- ইউরোপ মিটিং’ (আসেম) সম্মেলন উপলক্ষে ১৪ থেকে ১৬ জুলাই মঙ্গোলিয়া সফর করেন। এই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আসেম সম্মেলনেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সশস্ত্র জঙ্গিরা হামলা চালায়। হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রথম পদক্ষেপেই নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা এবং আহত হন অর্ধশতাধিক।
জঙ্গিরা রেস্তোরাঁয় থাকা ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে। এদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, দুজন বাংলাদেশি এবং একজন মার্কিন নাগরিক। পরের দিন কমান্ডো অভিযানের সময় ছয় হামলাকারী নিহত হয়। এ ঘটনার দায় মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করেছে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্ট।
এ ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় ঈদের দিন দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ মাঠের অদূরে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য ও এক নারী নিহত হন। এ সময় এক জঙ্গিও নিহত হয়।
এ দুটি ঘটনার পর নিহত বেশ কয়েকজন জঙ্গির পরিচয় বেরিয়ে আসে, যারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং তারা দেশের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। এ নিয়ে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল শনিবার রাজধানী থেকে দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্যসহ চারজনকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ তাঁদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রীর আজকের সংবাদ সম্মেলনেও বিষয়টি উঠে আসে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয় তাহলে সেটি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় সবার দৃষ্টি থাকত, দরিদ্র পরিবার অথবা মাদ্রাসাছাত্র তারাই বুঝি সন্ত্রাস করছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, হাইফাই ফ্যামিলি যারা ভালো খায়, ভালো পরে, ভালোভাবে চলে। একেবারে যাদের জীবনের সব চাহিদাই পূর্ণ হচ্ছে। কোনো চাহিদা অপূর্ণ না। সব চাহিদা পূর্ণ করার পর তারা আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে এখন খুন-খারাবিতে নেমে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.