রাজনৈতিক দলগুলো তাদের গত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া শুরু করেছে। গতকাল বুধবার ইসিতে সবার আগে ২০১৫ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দলটির মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ স্বাক্ষরিত দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বরাবর পাঠানো হয়েছে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত দুই বছর যথাযথ হিসাব জমা দেয়নি বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)। এবারও একই অবস্থা হলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত শুধু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিয়েছে। বাকিরা এখনো দেয়নি।
এর আগে গত ১৫ জুন ইসির নিবন্ধনে থাকা ৪০টি রাজনৈতিক দলকে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব চলতি মাসের (জুলাই) ৩১ তারিখের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়। তবে উচ্চ আদালতের রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় দলটিকে এ-সংক্রান্ত কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।
ইসি সূত্রে জানা যায়, আইন অনুযায়ী ইসির নিবন্ধনে থাকা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব ইসির চাহিদামতো জমা দিতে না পারায় কমিশন তা গ্রহণ করেনি। পরবর্তী সময়ে দলটিকে এগুলো ঠিক করে জমা দিতে বলা হলেও দলটির পক্ষ থেকে তা করা হয়নি। তাই চলতি বছর যদি দলটি তাদের হিসাব যথাযথভাবে জমা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কমিশন ইচ্ছা করলে আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে।
ইসি সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন তাদের যথাযথভাবে হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হয়।
তবে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব যথাযথভাবে জমা না দেওয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আগের দুই বছরের হিসাব ঠিকঠাক জমা দেওয়া হয়েছে। যিনি বলেছে হিসাব জমা দেওয়া হয়নি, তিনি হয়তো বিষয়টি ঠিকমতো জানেন না।’
দিলীপ বড়ুয়া আরো বলেন, ‘যথাযথ হিসাব দেওয়া হয়নি বললে তো হবে না। এ বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। আর আগের দুই বছরের হিসাব তো তারা রিজেক্টও (বাতিল) করেনি, গ্রহণ করেছে।’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আর্থিক লেনদেনের হিসাব প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম দিয়ে দলের হিসাব নিরীক্ষণ করাতে হবে। এ হিসাবে সদস্য সংগ্রহসহ কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনে জমা দিতে হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ, ১৯৭২-এর ৯০-এইচ(১) (সি) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধিত কোনো দল যদি পরপর তিন বছর কমিশনে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে কমিশন।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের নির্ধারিত একটি ছকে জমা দিতে হবে। কমিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাবের ফরম দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি খাত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট তথ্য তারিখসহ উল্লেখ করতে হবে।
নিবন্ধন অবৈধ থাকায় চিঠি দেওয়া হয়নি জামায়াতকে
আদালতের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত থাকা জামায়াতে ইসলামীর গত পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে চিঠি দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে অংশ নিতে ২০০৮ সালে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর ৩৯টি দল তালিকাভুক্ত হয়। পরে সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তিনটি দল নিবন্ধিত দলের তালিকায় যোগ হলেও নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় বাদ পড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়। বর্তমানে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকা সংরক্ষণ করছে ইসি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.