চাচা আবদুর রহিম মিয়ার দেয়া মোবাইলফোন রেখে ভাতিজা ইয়াসিন সিপনকে ১৪ মাস জেল খাটতে হয়েছে। অবশ্য পরে পুলিশ তার দেয়া জবানবন্দির সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তাকে সাত খুনের অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছে। সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় সাক্ষী দিতে এসে ইয়াসিন সিপন একথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকার একটি সড়কে দরজার গ্লাস ভাঙা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা প্রাইভেটকারের (নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের প্রাইভেটকার) ভেতর থেকে একটি মোবাইলফোন পেয়ে সেটা মেসে নিয়ে চাচা আবদুর রহিম তার কাছে রাখেন।
পরে সে ওই মোবাইলফোনে সিম লাগিয়ে ব্যবহার করার সময় পুলিশ ঢাকা মোহাম্মদপুর এলাকার হাজীর মেসের তৃতীয় তলা থেকে ২০১৪ সালের ৩ মে রাত সাড়ে ১২টায় তাকে আটক করে বলে জানান সিপন।
এরপর তিনি পুলিশকে চাচার কাছ থেকে মোবাইলফোন নেয়ার বিষয়টি জানান। পরে এর সত্যতা খুজে পায় পুলিশ।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০ পর্যন্ত সাত খুনের ঘটনায় ইয়াসিন সিপনসহ র্যাব-১১ এর তৎকালীন এএসপি মোবারক হোসেন, আলামত উদ্ধারের জব্দ তালিকার সাক্ষী কামাল হোসেন, আবদুল হেকিমসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
গ্রেফতার নূর হোসেন, তারেক মুহাম্মদ সাঈদসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন সাক্ষ্য শেষে আগামী ১ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, র্যাব-১১ এর তৎকালীন এএসপি মোবারক হোসেন সাক্ষী দিতে এসে বলেছেন, অপহরণ ও সাত খুনের সময় র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, রানা ও আরিফের ব্যবহার করা তিনটি গাড়ি পুলিশের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন।
এর আগে পুলিশ ওই তিনটি গাড়ি আটক করে জব্দ তালিকা করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, এ পর্যন্ত সাত খুনের দুই মামলায় ৯২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।
সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজী চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা বিজয় কুমার পাল ও অপর মামলার বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও ১২ জন পলাতক রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.