মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ছবি : রয়টার্
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অপ্রস্তুত এবং অযোগ্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বারাক ওবামা। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতাই নেই ট্রাম্পের। তা সত্ত্বেও রিপাবলিকান পার্টি কীভাবে তাঁকে এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তা তাঁর কাছে বিস্ময়কর।
বিবিসি জানায়, হোয়াইট হাউসের এ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংক।
সংবাদ সম্মেলনে ইরাক যুদ্ধে গিয়ে নিহত মার্কিন মুসলিম সেনা হুমায়ুন খানের বাবা খিজির খান এবং মা গাজালা খানকে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কটাক্ষের সমালোচনা করেন ওবামা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অবিবেচক এ প্রার্থী এমন একটি পরিবারকে আক্রমণ করেছেন, যাঁরা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। বাস্তবিক অর্থে এমন বিষয়ে মৌলিক ধারণাই নেই তাঁর।’ ওবামা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রার্থী অযোগ্য। তিনি একের পর এক সেটিই প্রমাণ করে যাচ্ছেন।’
আগের দুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী জন ম্যাককেইন ও মিট রমনির কথায় ওবামা বলেন, ‘এর আগের দুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের দুই প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম তিনি। তাদের সঙ্গে নানা ইস্যুতেই ভিন্নমত ছিল। কিন্তু তাই বলে তাঁদের সম্পর্কে কখনো এমন ধারণা হয়নি যে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যই নন।’
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সেনার বাবা-মাকে নিয়ে কটাক্ষ করায় ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান দলের প্রবীণ নেতা জন ম্যাককেইন। রিপালিকান পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, ‘আমাদের গর্বদের মানহানি করার জন্য ট্রাম্পকে সীমাহীন অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে বাগদাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খান নামের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক। সম্প্রতি চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন তাঁর বাবা খিজির খান। ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ট্রাম্পের এই নীতি যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে তাঁর ছেলে কখনোই মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুযোগ পেত না।
ভাষণে ট্রাম্প সংবিধান পড়েছেন কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন খিজির। ট্রাম্প আরলিংটন সমাধিক্ষেত্র (সেখানকার জাতীয় সেনা সমাধিক্ষেত্র) পরিদর্শন করেছেন কি না তাও জানতে চান তিনি। বলেন, ‘আমেরিকাকে সুরক্ষিত রাখতে জীবন দেওয়া সাহসী দেশপ্রেমীদের সমাধি দেখে আসুন। আপনি দেখতে পাবেন সব ধর্মের, লিঙ্গের ও জাতির মানুষ রয়েছেন সেখানে।’
খিজির খান তাঁর এই বক্তব্যের জন্য প্রশংসিত হলেও ট্রাম্প এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। পাশাপাশি আবারও বিতর্কিত মন্তব্য করেন। ডেমোক্র্যাটিক সম্মেলনে খিজির খানের স্ত্রী গাজালা কোনো কথা বলেননি উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, হয়তো তাঁকে কথা বলতে দেওয়াই হয়নি। ট্রাম্প ইঙ্গিত করেন, মুসলিম পারিবারিক নিয়মে মেয়েদের নীরব থাকাই নিয়ম। কারণ তাঁরা স্বামীর অনুগত। পরে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এক টিভি সাক্ষাৎকারে খিজির খান বলেন, ‘একজন নিহত সৈনিকের পরিবারের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, ট্রাম্প তা জানেন না।’
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার লড়াই শুরুর পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত ও বিদ্বেষপূর্ণ-বর্ণবাদী মন্তব্য করে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সেনার মায়ের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্যের জের না কাটতেই সবশেষ হিলারি ক্লিনটনকে দ্য ডেভিল বা শয়তান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কদিন আগে রাশিয়াকে হিলারির ইমেইল রাজ্যে হানা দিতে বলে চূড়ান্ত বিতর্কিত বাস্তবতার জন্ম দেন তিনি।
এর আগেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের যোগ্যতার প্রশ্ন উঠেছিল। পরস্পরের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন হিলারি-ট্রাম্প। প্রার্থিতার লড়াই চলমান থাকা অবস্থায় গত মে মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রনীতির জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ট্রাম্পের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিলারি। জবাবে পাল্টা অবস্থান নিয়ে ট্রাম্প বলেন, হিলারির বিচার বিবেচনা খারাপ, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের এই নাজুক ও কঠিন সময়ে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা নেই।
এর আগেও প্রার্থিতার লড়াই শুরুর পর বেশ কয়েকবার ভয়াবহ বিতর্কে জড়িয়ে পড়িছেলেন হিলারি-ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সভায় হিলারিকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগও রয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.