রার্থনা আর সেবা- এই দুটি ব্রত নিয়ে যিশু খ্রিস্টের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেন খ্রিস্টান নানরা। ভোগ-বিলাসের জীবন ত্যাগ করে ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তারা।
রাজধানীর তেজগাঁয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ‘মারিয়ার সঙ্গিনির সংঘ’ নামে কেন্দ্রীয় আশ্রমে গিয়ে দেখা যায় চ্যাপেলে চলছে ‘সন্ধ্যারতি’ নামে সন্ধ্যা বেলার প্রার্থনা। যেখানে জড়ো হয়েছে সংঘের সকল বয়সী নানরা।
ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় তাদের প্রার্থনা। প্রভাত বন্দনা করে গির্জায় যান। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজ নিজ সেবা কাজে।
প্রার্থনা থেকেই মূল শক্তিটা পান বলে জানান যিশুর জন্য আত্মত্যাগী এই কুমারীরা।
সংঘের প্রশাসন বিভাগে সুপিরিয়র জেনারেলের দায়িত্বে আছেন সিস্টার মেরি মিনতি।
তিনি বলেন, ‘নান হবার কিছু ধাপ আছে যা মেট্রিক (এসএসসি) এর পর শুরু হয়, সেই ধাপ চলে দুই থেকে আড়াই বছর। তাদেরকে কিছু প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয় তারপর ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি) পাশ করার পরে তাদের কালীগঞ্জ গঠন গৃহে পাঠানো হয়।’
সিস্টার মিনতি আরও জানান, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রথম বছর যাকে বলা হয়- ফার্স্ট ইয়ার নবীশ। জীবন সম্পর্কে এই এক বছর পড়াশুনা হয়। দ্বিতীয় বছরে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয় সেবামূলক কাজ শিখতে। এরপর আড়াই বছরে গির্জায় গিয়ে ফাদারের কাছে বিশপের সামনে সব স্বীকার করতে হয়।’
নানদের জন্য বাংলাদেশে মোট ২৮টি আশ্রম আছে এবং সব মিলিয়ে ২১৬ জন সিস্টার শিক্ষকতা, চিকিৎসা, নার্সিং, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিস্টার মেরি জ্যাকলিন, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে সিস্টার হবার আকর্ষণ ছিল। ব্রত জীবনের চার বছর পূর্ণ করেছেন তিনি।
নান হওয়ার ব্রত তিনটি। বাধ্যতা, দারিদ্র্য ,কৌমার্য। আর এই তিনটি ব্রত ২২ বছর বয়সী জ্যাকলিন এর মনে কখনও কি বাধা সৃষ্টি করেনি?
সিস্টার জ্যাকলিন বলেন, ‘অনেক সময় করে, কারণ আমি ইয়াং মানুষ। বাইরের যাবতীয় বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো মোহ যেন না আসে সেজন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। সারেন্ডার উইথ গড।’
কখনও কি কাউকে ভালো লাগেনি বা কেউ কি বলেনি ভালোবাসার কথা? এমন প্রশ্নের জবাবে সিস্টার জ্যাকলিন জানান, ছোটবেলা থেকেই নান হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাই কখনও ওরকমটা ভাবেননি; কিন্তু কেউ কেউ তাকে ভালোলাগার কথা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু তেমন আহামরি সুন্দর নই। কিন্তু মানুষ হিসেবে প্রস্তাব আসতে পারে, আসছে। কিন্তু আমার ওরকম ঝোঁক আসেনি।’
ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে জীবনের অনেক ভোগ-বিলাস হতে তারা বঞ্চিত এমনকি মা হবার আনন্দকেও তারা ত্যাগ করেন।
প্রবীণ সিস্টার ক্রিস্টদাশি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্রতগুলো নেয়ার সময় তাদের শিক্ষা দেয়া হয়- যাদের আমরা পড়াই তারাই আমাদের সন্তান। আমাদের সমস্ত ভালোবাসা তাদের জন্য কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। বাইবেলে লেখা আছে, ‘দ্বারে হাত দিয়ে পেছনে কখনও যেন ফিরে না তাকাই।’ আর এই শক্তিই আমাদের অন্তরকে জাগ্রত করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.