ফাইনালে জার্মানি-সুইডেন
এবারও পারলো না ব্রাজিলের নারী ফুটবল দল। পারলেন না দেশটির ফুটবল ইতিহাসের সেরা নারী খেলোয়াড় মার্তা। কাঁদলেন তিনি। কাঁদালেন দেশের অগণিত ফুটবল ভক্তদের। খালি হাতেই বিদায় নিতে হচ্ছে মার্তাকে। ব্রাজিলিয়ান এ নারী স্ট্রাইকারকে কিংবদন্তি পেলে বিশাল এক স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাকে ‘স্কার্ট পরা পেলে’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু শিরোপা জয়ে ঠিক পেলের মতো হয়ে উঠতে পারলেন না মার্তা। বরং মাঠ কাঁপানো এ নারী খেলোয়াড় শিরোপা জয়ে লিওনেল মেসির মতোই হয়ে রইলেন। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লিওনেল মেসি ক্লাবের হয়ে কত কত শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু দেশকে এখনও বড় কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি। তিন বছরের মধ্যে তার নেতৃত্বে ৩ বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরেছে আর্জেন্টিনা। এতে ক্ষোভে-অভিমানে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেন তিনি। যদিও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। আর্জেন্টাইন মেসির মতো দশা ব্রাজিলের নারী ফুটবলার মার্তার। তিনিও ব্রাজিলের নারী ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়। দেশের হয়ে ১০১ ম্যাচে করেছেন সর্বোচ্চ ১০০ গোল। যেমন মেসি তার দেশের হয়ে করেছেন সর্বোচ্চ ৫৫ গোল। লিওনেল মেসি পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। মার্তাও ২০০৬ থেকে ২০১০-টানা পাঁচবার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ফিফা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোলের রেকর্ডও এখন মার্তার দখলে। কিন্তু বড় দুঃখ নিয়েই বিদায় নিতে হচ্ছে তাকে। ব্রাজিলকে কোনো শিরোপা জেতাতে পারেননি ৩০ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকার। না পেরেছেন বিশ্বকাপে না পারলেন অলিম্পিকে। এবার নিজেদের মাটিতেই বসেছে অলিম্পিক। এখানে মার্তার সোনা জয়ের শেষ সুযোগ মনে করা হচ্ছিল। দেশের হয়ে তিনটি অলিম্পিকে খেলেছেন। ২০০৪ ও ২০০৮-এই দুইবার তিনি সোনা জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুইবারই তারা ফাইনালে হারে যুক্তারষ্ট্রের কাছে। এতে ওই দুইবার রুপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। আর সর্বশেষ ২০১২-লন্ডন অলিম্পিকে কোনো পদক-ই পায়নি তারা। কিন্তু এবার মার্তার জন্যই অলিম্পিকের সোনা জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল ব্রাজিল। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। এবার সেমিফাইনালে তারা হেরে গেলে টাইব্রেকারে। ভাগ্য-পরীক্ষায় ৪-৩ গোলে জিতে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের ফাইনালে উঠেছে সুইডেনের নারী দল। অথচ এই সুইডেনকেই গ্রুপপর্বে মার্তার জোড়া গোলে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। সুইডেন যেন টাইব্রেকার বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। অলিম্পিকে পুরুষদের ফুটবল অন্তর্ভুক্ত ১৯০০ সাল থেকে। কিন্তু নারীদের ফুটবল অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। সেবার থেকে পাঁচ আসরের চারবরাই সোনা জিতেছে যুক্তরাষ্ট্রের নারী দল। কিন্তু এবার সেই যুক্তরাষ্ট্রকেই কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দেয় সুইডেনের নারী দল। ওই ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে গড়ায়। আর সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও দুই দল গোল করতে ব্যর্থ হয়। ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করতে টাইব্রেকারের আশ্রয় নেয়া হয়। সেখানে ফেভারিট ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের ফাইনালে উঠে গেল সুইডেনের নারী দল। সোনা জয়ের লড়াইয়ে শুক্রবারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানি। অন্য সেমিফাইনালে কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে জার্মানি। একই দিনে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের লড়াইয়ে মাঠে নামবে ব্রাজিল ও কানাডা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.