বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) চট্টগ্রামের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম ভুঁইয়া। সাত মাস আগে তিনি বিটিসিএলের চট্টগ্রামের নন্দনকানন অফিস থেকে অবসর নেন।
আর এই সাত মাসেই অচেনা হয়ে গেলেন তিনি। নিজের অফিসের কর্মকর্তারাই ঘুষ ছাড়া ছাড়ছিলেন না পেনশনের ফাইল। লাগবে ৫০ হাজার টাকা।
আবুল কাশেম ভুঁইয়া এতে হতবাক হলেও ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। আর এ বিষয়ে অভিযোগ দেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।
এর পর বুধবার দুপুরে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার সময় বিটিসিএলের নন্দনকানন অফিসের প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবিরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুদক।
এ সময় গিয়াস উদ্দিনের অফিস কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় তার স্ত্রীর নামে করা ৮৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও নগদ ৮০ হাজার টাকা।
একই অভিযানে বিটিসিএলের বিভাগীয় প্রকৌশলী ফোন্স (অভ্যন্তরীণ) প্রদীপ দাশকেও গ্রেফতার করে দুদক।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাব্বির রহমান সানির নেতৃত্বে বুধবার দুপুরে নন্দনকানন অফিসে এ অভিযান পারিচালনা করা হয়।
এ সময় দুদক চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক মানিক লাল দাসও উপস্থিত ছিলেন।
আবুল কাশেম ভুঁইয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে দুদক জানায়, সাত মাস আগে আবুল কাশেম ভুঁইয়া অবসর প্রস্তুতিকালিন ছুটিতে যান। পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার জন্য তার ফাইলটি নন্দনকানন বিটিসিএল অফিস থেকে আগ্রাবাদ অফিসে অগ্রবর্তী করার জন্য তাগাদা দিতে যান তিনি।
কিন্তু এই অফিসের প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিন এ জন্য দাবি করে বসেন ৫০ হাজার টাকা। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার পর ঘুষের রেট কিছুটা কমে। ২০ হাজার টাকা দাবিতে অনড় থাকেন গিয়াস উদ্দিন।
এরপর দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক বরাবরে আবুল কাশেম ভুঁইয়া লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, কেবল তার কাছেই নয়, আরও পাঁচ সহকর্মী সাহাবউদ্দিন, মারুফা বেগম, সাধনা, রমা ও কোহিনুরের কাছ থেকেও বিটিসিএলের কর্তারা ঘুষ চেয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, তাদের পরামর্শে আবুল কাশেম দাবিকৃত টাকা ঘুষ দিতে যান বিটিসিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দুদকও এতে ওঁৎ পেতে থাকে।
ঘুষের টাকা নেয়ার সময় তারা হাতেনাতেই গ্রেফতার করেন অফিসের প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবিরকে।
একই অফিসে বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রদীপ দাশের কক্ষে তল্লাশি চালানো হলে একটি স্টিল কেবিনেটের ড্রয়ারে পাওয়া যায় নগদ এক লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা। ড্রয়ারে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ও দুই লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনা দুটি জমির দলিলও পাওয়া গেছে। এই টাকার উৎস জানাতে না পারায় তাকেও গ্রেফতার করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা মানিক লাল দাস যুগান্তরকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.