তীব্র বিতর্কের মুখে আরও একটি শহরে মুসলিম নারীদের সাঁতারের বিশেষ ধরনের পোশাক বুরকিনি নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স। এবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে নিস শহরে। এর আগে ১৫টি শহর ও বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বুরকিনি। ওদিকে ইতালিতে বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনো আলফানো। তিনি বলেছেন, এমন পদক্ষেপ নেয়া হবে অর্থহীন। এতে বরং উল্টো ফল হয়। ইতালির একজন ইমাম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে ৮ খ্রিস্টান সন্ন্যাসির পুরো শরীর ঢাকা পোশাক দেখানো হয়েছে। তা নিয়ে বেশ বিতর্ক জমে উঠেছে। সর্বশেষ ফ্যান্সের নিস শহরের সমুদ্র সৈকতে নিষিদ্ধ হলো বুরকিনি। শুক্রবার সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা এ ঘোষণা দিয়েছেন। গত মাসে এ শহরে বাস্তিল দুর্গের পতন দিবসের অনুষ্ঠানে ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে কমপক্ষে ৮৬ জনকে হত্যা করে এক তিউনিশিয়ান। এর ১২ দিন পরে রুয়েন শহরে একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজককে হত্যা করে দুই ঘাতক। তারপর ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে ও সমুদ্র সৈকতে বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়। বার্তা সংস্থা এএফপির মতে, এখন পর্যন্ত দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৫টি শহর সহ আরও কিছু এলাকায় বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বুরকিনি নিষিদ্ধ করা হয়েছে চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ কান শহরে। এ শহরে এরই মধ্যে তিনজন নারীকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বুরকিনি পরার কারণে ৩৮ ইউরো করে জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিস শহরের ডেপুটি মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এসট্রোসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস-এর কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, পুরো মুখ ঢেকে বা পুরো শরীর ঢেকে সৈকতে যাওয়া আমাদের সামাজিক সম্পর্কের আদর্শ রক্ষা করে না। বুধবার প্রধানমন্ত্রী ভালস বলেছেন, ফ্রান্স ও প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সঙ্গে মানায় না বুরকিনিকে। তার এ মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। ফ্যান্সের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস লিগ অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী ভালস ফরাসি জনগণকে একটি ক্যাটেগরিতে ফেলে কালিমা লেপনে অংশ নিয়েছেন। যেসব মানুষ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে জন্মেছেন তিনি তাদেরকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। উল্লেখ্য, ফরাসি সৈকতগুলোতে বুরকিনি পরা নারীর দেখা মেলা ভার। কালেভদ্রে এমন পোশাক পরা নারীকে দেখা যায় সৈকতে। তবে বেশির ভাগ মুসলিম নারীকে সাধারণ পোশাকে দেখা যায়। তাদের কারো কারো মাথায় থাকে স্কার্ফ। ফ্রান্সে ইসলামিক পোশাক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এ দেশটি ২০১০ সালে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করে। এর ৬ বছর পরে তারা মাথায় স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করেছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে সন্দেহজনক ধর্মীয় প্রতীক বা চিহ্ন নিষিদ্ধ করছে। এসব নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে তখন ইতালির ফ্লোরেন্সের একজন ইমাম শুক্রবার তার ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, আটজন নান বা সন্ন্যাসী মুখ ঢাকা পোশাক পরে আছেন সমুদ্র সৈকতে। এই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর সমালোচনা আরও গতি পেয়েছে। ওই ইমামের নাম ইজজেদিন এলজির। তিনি ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিউনিটিজ অব ইতালি (ইউসিওআইআই)-এর সভাপতি। তিনি যে ছবি প্রকাশ করেছেন তাতে কোন ক্যাপশন ব্যবহার করেন নি। তার পোস্ট করা ওই ছবি দুই হাজার বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে। নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। তাই ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে আপত্তি পাওয়ার পর কয়েক ঘন্টার জন্য এলজিরের ওই ফেসবুক পেজ বন্ধ করে রাখে কর্তৃপক্ষ। স্কাই টিজি ২৪ টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইজজেদিন এলজির বলেছেন, তিনি এ ছবি দিয়ে ইতিবাচক সমালোচনা শুরু করতে চেয়েছেন। এ জন্য তাকে অনেক খ্রিস্টানও ধন্যবাদ দিয়েছন। তার ভাষায়, আমি এ ছবিগুলো তাদের উদ্দেশে দিয়েছি যারা বলেন, যেসব মানুষ তাদের পুরো শরীর ঢেকে রাখে তাদের থেকে পশ্চিমা ভ্যালু বা মর্যাদা আলাদা। আমি বলতে চেয়েছি পশ্চিমা এই মূল্যবোধ এসেছে খ্রিস্টান সংস্কৃতি থেকে। আপনি দেখবেন যে, খ্রিস্টানদের আসল শিকড় হলো সেই সব মানুষ, যারা নিজেদের পুরো শরীর ঢেকে রাখেন। ওদিকে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনো আলফানো মঙ্গলবার বলেছেন, বুরকিনি নিষিদ্ধ করবে না ইতালি। তিনি বলেন, এমনটা করা হলে তা হবে অর্থহীন। এতে বরং উল্টো ফল হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.