‘ট্যাকা দেন দুবাই যাবো বাংলাদেশে থাকবো না’-এই একটি সংলাপ তাকে নিয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আর এই সংলাপটি তিনি বলেছিলেন বিশিষ্ট নির্মাতা আমজাদ হোসেনের নির্মাণে বিটিভির দর্শকপ্রিয় ঈদ নাটক ‘জব্বার আলী’তে। নাটকটিতে তার অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল ব্যাঙ্গা। তিনি ফরিদ আলী। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও নাট্যকার। এ মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। পৃথিবীর সব বন্ধন ছিন্ন করে গতকাল বিকাল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ফরিদ আলী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। এই অভিনেতা গত ১৫ই জানুয়ারি হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে নিকটস্থ ওয়ারী ডায়াবেটিস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানে তিনদিন থাকার পর চ্যানেল আইয়ের সহযোগিতায় তাকে ‘জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল’-এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতাও পান তিনি। এরপর কিছুদিন সুস্থ থাকলেও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি ঘটেনি। গত ১৯শে আগস্ট আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাকে ওয়ারীর বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখানকার ডাক্তারের পরামর্শে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডা. আবদুল কাদের আখন্দের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল ফরিদ আলীর। মৃত্যুর আগে তার ফুসফুসে পানি জমে যায়। সঙ্গে পা দুটো অবশ হয়ে যায়। সবার কাছে একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কৌতুকাভিনেতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও ফরিদ আলী ছিলেন একজন সাংবাদিকও। এ অভিনেতা পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজারের বাসিন্দা ছিলেন। সর্বশেষ গত ঈদে তিনি আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘পূর্ণিমার চাঁদে মেঘ’ নাটকে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও তা আর শেষ পর্যন্ত দেয়া হয়নি তার। শহীদুল আমীনের লেখা ‘কনে দেখা’ নাটকে একটি নারী চরিত্রে অভিনয় করে ১৯৬২ সালে তিনি অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। বিটিভির প্রথম হাসির নাটক ‘ত্রি রত্ন’র তিনজনের একজন ছিলেন ফরিদ আলী। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লেখনীতেও বেশ দক্ষ ছিলেন তিনি। বিটিভির চতুর্থ নাটক ‘নবজন্ম’ ছিল ফরিদ আলীর লেখা। তবে তার লেখা সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় আলোচিত নাটক ছিল ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’। অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন ফরিদ আলী। প্রফেসর মুনীর চৌধুরীর লেখা ‘একতলা দোতলা’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে তিনি প্রথম টিভিতে দৃশ্যমান হন।
আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ‘ধারাপাত’ চলচ্চিত্রে ব্যাঙ্গা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে ফরিদ আলীর সম্পৃক্ততা ঘটে। এরপর ‘সংগম’, ‘অভিশাপ’, ‘পরশমণি’, ‘গুণ্ডা’, ‘রংবাজ’, ‘সপ্তডিঙ্গা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জালিয়াত’, ‘পালংক’, ‘অধিকার’, ‘গোপাল ভাঁড়’, ‘তরুলতা’, ‘ঘুড্ডি’, ‘লাগাম’, ‘কলমীলতা’, ‘ভাগ্যলিপি’, ‘সাধনা’সহ বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ফরিদ আলী তার অভিনয় জীবনে চলচ্চিত্রে বেশি অভিনয় করেছেন রাজ্জাক-কবরীর সঙ্গে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ফরিদ আলী সবার ছোট। ১৯৭৫ সালের ২০শে আগস্ট মনোয়ারা বেগম বিউটির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ফরিদ আলী চার ছেলে ও এক মেয়ের গর্বিত পিতা। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে চ্যানেল আইতে এবং এরপর এফডিসিতে জানাজার পর বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.