ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও নাট্যকার ফরিদ আলী। গতকাল আসরের আগে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় রাজধানীর ঠাটারিবাজারস্থ নিজ বাসা সংলগ্ন মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাদ জোহর আনা হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বিএফডিসিতে। এখানে তার মরদেহ আনার পর সৃষ্টি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, প্রদর্শক সমিতি, ফিল্ম ক্লাব, ডিরেক্টর গ্লিড, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ নানা সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর এখানে অনুষ্ঠিত তার তৃতীয় জানাজায় অংশ নেন চলচ্চিত্রসহ নানা অঙ্গনের মানুষ। এদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা সুব্রত, রুবেল, মিজু আহমেদ, ওমর সানি, অমিত হাসান, সম্রাট, শিবা সানু, প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু, খোরশেদ আলম খসরু, রশিদুল আমিন হলি, ইকবাল, পরিচালক বদিউল আলম খোকন, এজে রানা, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকসহ অনেকে। জানাজা শেষে শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ওমর সানি বলেন, নিঃসন্দেহে তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আগামী শুক্রবার ফরিদ আলীর নিজ বাসায় মিলাদ মাহফিলের পর শনিবার বিকালে শিল্পী সমিতির উদ্যোগে একটি মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সবাইকে তিনি সেখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধও করেন। এদিকে ফরিদ আলীর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত তার সহকর্মীরা। এদের মধ্যে বিশিষ্ট পরিচালক আমজাদ হোসেন তার সম্পর্কে বলেন, টেলিভিশন নাটক যখন শুরু হয় তখন অভিনয়ের জন্য আমি নিয়ে আসি ফরিদ আলীকে। এরপর টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার পর আমার নাটক দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে যখন প্রথম ‘জব্বার আলী’ শুরু করি, তিনিও আমার সঙ্গে ছিলেন। তার মুখের সংলাপ ‘ট্যাকা দেন দুবাই যামু’ খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বয়সে তিনি আমার বড়। কিন্তু আমাকে খুব সম্মান করতেন। ঢাকার নামকরা পরিবারের ছেলে ছিলেন। বেশ ভালো অভিনয়ও করতেন। আমজাদ হোসেন আরো বলেন, এর আগেরও কিছু সময়ের কথা বলতে হয়। ১৯৬৩ সালে আমার লেখা ও নির্দেশনায় মঞ্চনাটক ‘ধারাপাত’-এ অভিনয় করেন তিনি। পরে ‘ধারাপাত’ নিয়ে যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, এখানেও তিনি একই চরিত্রে অভিনয় করেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। আমার পরিচালনায় প্রতি বছর ‘জব্বার আলী’ সিরিজের নাটক হয় কিন্তু শেষ দুই বছর ধরে তাকে আমি পাচ্ছিলাম না। একটু সুস্থ হলেই আমাকে ফোন করতেন। জায়গা জমি নিয়ে শেষদিকে অনেক টেনশন করতেন। হঠাৎ শুনলাম যে মারা গেছেন। আমার হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন। ফরিদ আলীকে নিয়ে অভিনেতা সুব্রত বলেন, কয়েক দিন আগে তার ঠাটারি বাজারের বাসায় গিয়েছিলাম। উনার বাড়ির পাশে ছোট্ট একটা মিষ্টির দোকান ছিল। তিনি জিলাপি খেতে খুব পছন্দ করতেন। চিকিৎসকের বারণ সত্ত্বেও মিষ্টি খাওয়া ছাড়েননি। তিনি আমাদের অভিভাবকও ছিলেন। আমরা যে বাইরে যেতাম অনেক সময় বিপদেও পড়তাম। আমাকে উদ্ধারকর্তা হিসেবে ফরিদ আলী ভাই ছিলেন। আমরা যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শো করতে যেতাম, অনেক সময় আয়োজকরা অনুমতি না নিয়ে আমাদের দাওয়াত দিয়ে বসতেন। সেখানে যাওয়ার পর বিষয়টি টের পেতাম। এ ব্যাপারটি ফরিদ ভাই জানার পর আয়োজকদের বলতেন, তোমাদের ডিসি অফিস কোথায়? সেখানে আমাকে নিয়ে যাও। দেখি কী করা যায়। সেখানে গিয়ে তিনি ডিসি সাহেবকে মানিয়ে শো করে চলে আসতেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.