প্রাণ আরএফএল গ্রুপের এক নারী কর্মচারীকে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ এবং প্রচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৬ ধর্ষককে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষক আশিকুর রহমান (৩৫), ইলিয়াছ (২১), রুমিন (২০) ও রবিন (২২) নামে ৪ ধর্ষককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩) ধারায় মৃত্যুদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং ইব্রাহিম ও আবদুর রহমান নামে ২ ধর্ষককে একই আইন ও ধারায় মৃত্যুদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮ ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) শামীম আহম্মদ এই রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আশিকুর রহমান পলাশ থানার বাগমারা গ্রামের মৃত কুদ্দুস আলীর পুত্র, ইলিয়াছ একই গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র, রুমিন একই গ্রামের সিরাজ শেখের পুত্র, রবিন একই গ্রামের হানিফার পুত্র, ইব্রাহিম একই গ্রামের মন্টু মিয়ার পুত্র এবং আবদুুর রহমান একই গ্রামের আবদুস সালাম মিয়ার পুত্র। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৩ সনের ২৩শে মে পলাশ থানার বাগপাড়া গ্রামে অবস্থিত প্রাণ আরএফএল কোম্পানির ফার্নিচার-২ এর এক নারী কর্মচারী তার অফিসের প্রাত্যহিক কাজ শেষ করে একই গ্রামের মুক্তা ভিলায় তাদের নিজস্ব মেসের উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি বেলা আড়াইটায় জনতা মিল গেইটের সামনে পৌঁছলে ধর্ষক আশিকুর, ইলিয়াছ ওরফে শফিকুল, রুমিন, রবিন, ইব্রাহিম ও আবদুুর রহমান তাকে ধরে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী একটি নির্জন স্থানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় রুমিন তার মোবাইলে ধর্ষণক্রিয়ার ছবি ধারণ করে রাখে। এ সময় তাকে সহযোগিতা করে ধর্ষক ইব্রাহিম ও আবদুর রহমান। ধর্ষিতা কর্মচারী এই ঘটনা প্রাণ আরএফএল কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক ডিপিএল (অ্যাডমিন) এএসএম সাদেকুল ইসলামকে জানালে তিনি ঘটনাটি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলে সহকারী ব্যবস্থাপক এএসএম সাদেকুল ইসলাম কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন, এজিএম মো. ফজলে রাব্বী এবং ধর্ষিতা কর্মচারীকে নিয়ে পলাশ থানায় গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পলাশ থানা পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৬ ধর্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দাখিলকৃত চার্জশিট অনুযায়ী ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও পর্যালোচনা শেষে বিজ্ঞ বিচারক শামীম আহম্মদ গতকাল মঙ্গলবার এক জনাকীর্ণ আদালতে ৬ ধর্ষকের ফাঁসি ও অর্থদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। বিজ্ঞ বিচারক তার রায়পত্রে ধর্ষকদেরকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আসামীগণকে রায় ঘোষণার ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দিয়েছেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট কানিজ ফাতেমা ও এডভোকেট একেএম ওয়ালিউল্লাহ। আসামিপক্ষে ছিলেন এডভোকেট এমএ আউয়াল, এডভোকেট মিঠু ও এডভোকেট মনিরুজ্জামান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.