সরাইলে থেমে নেই বাল্যবিবাহ। স্ত্রীর মৃত্যু, আত্মহত্যা, সংসার জীবনে অশান্তি কোনোটাই রোধ করতে পারছে না বাল্যবিবাহ প্রথা। কিছু ক্ষেত্রে কাজী বেঁকে বসলেও বিয়ে হয়ে যায়। কারণ স্থানীয় কিছু সমাজপতি ও জনপ্রতিনিধি টাকা পেলে সবই পারেন। তারপর রয়েছে নোটারি পাবলিক। আর প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্য হচ্ছে- খোঁজ নিয়ে দেখছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরই মধ্যে সর্বশেষ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ আবু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল ১৩ বছরের শিশু সালমার। এ বিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আর প্রশাসন এখনো বলছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। স্থানীয় বাল্যবিবাহ বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে- তাদেরকে জানানোর জন্য কি আরেকটি বিভাগ খুলতে হবে? সরেজমিন অনুসন্ধানে ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, নোয়াগাঁও মুতাঈদ বাড়ির অলি আহমেদের ছেলে আবু মিয়া ৪ সন্তানের জনক। তার রয়েছে অর্ধডজনেরও অধিক নাতি নাতনি। আবু মিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি করতেন। ৪৫ বছর চাকরি করার পর ২০০৫ সালের জুন মাসে তিনি অবসরে আসেন। তার স্ত্রী ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। পরে অসুস্থ হয়ে প্রথম স্ত্রী মারা যান। কিছুদিন পরই আবু মিয়ার নজর পড়ে একই গ্রামের দিনমজুর রফিকুলের শিশুকন্যা সালমার (১৩) উপর। বছরখানেক আগে সালমার বাল্যবিবাহ হয়েছিল নরসিংদীর এক ছেলের সঙ্গে। ছেলেটি মাদকাসক্ত ও দরিদ্র হওয়ায় বিয়ের ৩ দিন পরই সালমা বাবার বাড়িতে চলে আসে। ১ মাস আগে ওই ছেলেকে ডিভোর্স দিয়েছে সালমা। সালমাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যান বৃদ্ধ আবু মিয়া। মেয়েকে যৌতুক দেয়ার প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সালমার পরিবার সম্মত হলেও বেঁকে বসেন কাজী। কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্ক সালমা ডিভোর্স দিয়েছে মাত্র ১ মাস আগে। ৩ মাস না হলে দ্বিতীয় বিয়ের বিধান নেই। আবু মিয়া আশ্রয় নেয় নোটারি পাবলিকের। গত ২৬শে আগস্ট শুক্রবার শিশু সালমার সঙ্গে বিয়ে হয় আবু মিয়ার। সালমাকে ১ বিঘা ফসলি জমি ও বাড়ির ২ শতাংশ জায়গা লিখে দিয়েছেন বৃদ্ধ স্বামী। শিশু ও বৃদ্ধের এমন বিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে গোটা উপজেলায়। এ দম্পতিকে এক নজর দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে এসে ভিড় করেন উৎসুক লোকজন। অথচ উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। বৃদ্ধ আবু মিয়া অল্প বয়সী সালমাকে বিয়ে করার কথা স্বীকার করে বলেন, সব মিলিয়ে ৪৫ বছর শুধু চাকরিই করেছি। এখন একা। তাই বিয়ে করে ফেললাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.