নিজের ব্যবসায়িক কাজে বুধবার ঢাকা এসেছিলেন মফস্বল শহরের এক নারী। কথা ছিল, কাজ শেষে সেদিনই ফিরে যাবেন তিনি। কিন্তু গত তিনদিনেও তিনি ঢাকা ছাড়তে পারেননি। এখন তার ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালের বিছানা। তারই এক পারিবারিক ঘনিষ্ঠজন ও তার সহকর্মীদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তার ওপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। অভিযুক্তদের একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। তার নাম এমএ কাশেম। ‘অন্তরে আঘাত’ নামে একটি বাংলা সিনেমা তিনি পরিচালনা করেছেন। আরেক অভিযুক্ত সালাউদ্দিন শামীমও একই পেশার সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানিয়েছে, ইতিপূর্বেও তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এবারই প্রথম হাতেনাতে ধরা খেলো। গত ৩১শে আগস্ট ওই নারী গণধর্ষণের শিকার হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুই অভিযুক্তকে হাতেনাতে আটক করে। গত বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ওই মামলায় তারা দুজন গ্রেপ্তার রয়েছে। সূত্র জানায়, গত ৩১শে আগস্ট ওই নারী দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর থেকে তার খালাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসেন। তারা সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান। কাজ সেরে ওই দিনই নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৩টার দিকে তাকে ফোন করে পারিবারিক ঘনিষ্ঠজন বাংলা সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা এমএ কাশেম। ইতিপূর্বে কাশেম ওই নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। ওই দিন ঢাকা আসার কথা শুনে ফোন করে কাশেম জানান, তার টাকাটা ফেরত দিতে চান। এজন্য তিনি এফডিসিতে যেতে বলেন। ওই নারী এফডিসির ভেতরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন কাশেম কাকরাইলে তার নিজ অফিসে যেতে বলেন। তাকে কাকরাইল সিনেমা হলের কাছে যেতে বলেন। পরে বিকাল ৫টার দিকে ওই নারী তার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের সিনেমা হলের সামনে যান। সেখান থেকে কাশেমের অফিসের কেয়ারটেকার তাদের ‘ভূঁইয়া ম্যানশন’ নামে একটি ভবনের চারতলায় নিয়ে যান। একটি রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কাশেম তাদের তার রুমে ডেকে নেন। এ সময় সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সেখানে হাজির হন। তিনিও অভিনেতা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর টাকা দিতে না চাইলে তারা চলে আসতে চান। বলেন, আজই তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে হবে। ওই সময় কাশেম তাদের বলেন, আপনাদের জন্য টিকিট আনতে পাঠিয়েছি। টিকিট আনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। এ সময় সঙ্গে থাকা খালাতো ভাইকে কাশেম নিচে গিয়ে কিছু নাস্তা আনতে বলেন। তিনি এ সময় পিয়নকে পাঠাতে বললে পিয়ন নেই বলে জানান। এরপর খালাতো ভাই নিচে নামেন। নামার সময় অফিসের এক কর্মচারী চান মিয়ার সঙ্গে সিঁড়িতে তার দেখা হয়। পুরো ঘটনাতে তার সন্দেহ হলে কয়েক মিনিট পরই তিনি তার বোনকে ফোন দেন। কিন্তু একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ না হওয়ায় তার সন্দেহ আরো বাড়ে। একপর্যায়ে ফোনটি কাশেম রিসিভ করে বলেন, তার বোন এখানেই আছে। তুমি একটু ঘুরে আসো। তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওপরে ওঠেন। রুমের সামনে গিয়ে দেখেন, বাইরে থেকে তালা ঝুলানো। কিন্তু ভেতরে গোঙানোর শব্দ শুনতে পান। তিনি নিচে নেমে ওই অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রাশেদকে ফোন দেন। তিনি জানান, সে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাকে ফোন দিয়ে ‘বিরক্ত’ করতেও নিষেধ করে। এরপর ওই নারীর ভাই তার বন্ধু পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তার ভাতিজাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানালে তিনি ঘটনাস্থলে রমনা থানার পুলিশ পাঠানোর কথা বলেন। এর কয়েক মিনিট পরেই কয়েকজন পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। পুলিশ নিয়ে চার তলায় গেলে ভেতরের কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। তারা বাইরে থেকে তালা দেখে প্রথমে ধারণা করেন সেখানে কেউ নেই। পরে ভবন থেকে পিছনের দরজা দিয়ে কাশেম নিচে নেমে আসলে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে দরজা খুলে বাথরুমের পাশে ওই নারীকে অচেতন ও বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় এমএ কাশেম এবং সালাউদ্দিন শামীমকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুদীপ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ভিকটিম বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষার পর রিপোর্ট হাতে পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মূল আসামি এমএ কাশেম এবং সহযোগী হিসেবে সালাউদ্দিন শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.