ইবাদত হোসেন চৌধুরী
বাবা বিজিবিতে চাকরি করতেন। বাবার দেখানো পথেই হাঁটলেন ইবাদত। শৃঙ্খলিত জীবন গড়বেন বলে যোগ দিলেন বিমান বাহিনীতে। স্বপ্ন ছিল এখানেই নিজেকে নিয়ে যাবেন অনেক উঁচুতে। এয়ারফোর্সের ছকে বাঁধা জীবনে চাকরির পাশাপাশি চলছিল খেলাধুলাও- ভলিবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি। কিন্তু কে জানতো জীবনের গতিপথ-দিক বদল করে তাকে নিয়ে যাবে ক্রিকেটের রঙিন দুনিয়ায়। বাংলাদেশের নতুন গতি তারকার মুখেই শুনুন দিক-বদলের গল্পটা- বিমান বাহিনীতে অন্য সব খেলার চর্চা থাকলেও ক্রিকেট ছিল না। আমি মূলত ভলিবল খেলতাম। ভলিবলে হাত আর কোমরের উপরই সবচেয়ে বেশি চাপ যায়। ক্রিকেটেও একজন বোলারের তাই। ক্রিকেটের প্রতি একটু আগ্রহ দেখে বিমান বাহিনীর অনেকেই আমাকে অনুপ্রেরণা দিলেন। সেই উৎসাহ থেকেই স্বপ্ন দেখা। রবি পেসার হান্ট শুরুর খবর পেয়েই নিবন্ধন করলাম। কিন্তু তারপরও ভয় কাটছিল না। তবে যেদিন ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আমাদের ট্রায়াল চলছিল, সেদিন আমি নিজের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। আর তাতেই হয়ে গেলাম পেসার হান্টের সেরা গতির বোলার। অনেকটা রূপকথার গল্পের মতোই ইবাদত হোসেন চৌধুরীর সর্বোচ্চ গতির বোলার হয়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতেন। বলও করতেন অনেক জোরে। তবে প্রতিভা পাড়ার ক্লাবেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বিকশিত করার চেষ্টাও করেননি সেভাবে, সুযোগও আসেনি ঠিকমতো। মৌলভীবাজারের বড়লেখা কাঁঠালতলি গ্রামের সেই ইবাদতের সামনে এখন সম্ভাবনার হাতছানি, জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন! সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। পেসার হান্টের চমক ইবাদত প্রথমে বিসিবির বোলিং কোচ সারোয়ার ইমরানের ছাত্র ছিলেন। অনেকেই ক্যারিয়ার বদলে দেয়া এই কোচের কাছ থেকে শিখলেন অনেক কিছু। এরপর স্বপ্ন পূরণের পথে এগোলেন আরেক ধাপ। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের ছোট্ট তালিকায় নাম উঠলো ইবাদতের। পাকিস্তানের বোলিং কিংবদন্তি আকিব জাভেদের সংস্পর্শও পেয়ে গেলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এক সপ্তাহের জন্য আকিবকে নিয়েছে ভবিষ্যৎ তারকার জন্য। আকিব জাভেদ তো ইবাদতের বোলিং দেখে অবাক। এই শরীর নিয়ে তুমি এতো জোরে বল করতে পারো। ইবাদত বলেন, আকিব স্যারের কাছ থেকে শিখেছি নতুন বলে কিভাবে গতি আরো বাড়ানো যায়। আর পুরনো বলে রিভার্স সুইংটা কিভাবে নিখুঁত করতে হয়। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড এখন সিলেটে। একদিন অনুশীলনের পর পরশু (রোববার) থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। স্কোয়াডের ২২ জন দুই দলে ভাগ হয়ে অংশ নিচ্ছে প্রস্তুতি ম্যাচে। ২৬ জনের মূল এইচপি স্কোয়াড হলেও শুভাশিষ রায় জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকায় আসতে পারেননি। আর তিনজনের সিলেট আসা হয়নি ইনজুরির কারণে। গত পরশু অনুশীলন শেষে কথা হয় ইবাদত হোসেনের সঙ্গে। রবি পেসার হান্টে সর্বোচ্চ গতি তুলে অর্জন করে প্রথম স্থান, পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলেন এক লাখ টাকা। এই স্বীকৃতি তাকে আরো বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা দেয়। গতি বাড়তে বাড়তে ইবাদত এখন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩৯.০৯ গতিতে বল করতে পারেন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বেশি গতিতে বল করেছেন মাত্র দু’জন। তবে সেই তাসকিন আহমেদ আর রুবেল হোসেনও ইবাদতের আদর্শ নন। মাশরাফি বিন মুর্তজাকেই দেশে এবং বিদেশে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতি তারকা ব্রেট লিকে আদর্শ মানেন ইবাদত। এইচপি স্কোয়াডে থাকা ইবাদতের টার্গেট সিলেটে চলমান প্রস্তুতি ম্যাচ এবং পরবর্তীতে ঢাকায় চার দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো খেলা। সেখান থেকে বিসিএলে জায়গা করে নিতে চান এই গতি তারকা। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিতে চান জাতীয় দলে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.