নরসিংদীতে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহ বেড়েছে খামারি ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
নরসিংদীতে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘাস, খড়, ভুসি ও দানাদার খাবারের মাধ্যমে গরুর ‘মোটাতাজা’ করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন খামারি, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তারা। ঈদুল আজহাকে ঘিরে জেলার ছয়টি উপজেলার পাঁচ শতাধিক খামারে এভাবেই গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলার অধিকাংশ খামারির দাবি, তাঁরা তাঁদের খামারের গরুর দেহে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক কিংবা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কিছু প্রয়োগ করছেন না; বরং তাঁরা প্রাকৃতিক উপায়কেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ, প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠা গরুর বাজারে কদর থাকে। সামাজিক বিষয়টিও মাথায় রাখছেন তাঁরা। আর আসন্ন কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন তাঁরা। তবে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকলে দেশের গরুর ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় বাজারে দেশের গরুর চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে মূলত দেশের ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর কোরবানির ঈদ ঘিরে নরসিংদীতে গরু মোটাতাজাকরণ অনেক বেড়েছে। তবে অধিকাংশ খামারি এবার প্রাকৃতিক উপায় বেছে নিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে জেলার ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার খামারি, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ হাজার গরু মোটাতাজা করেছেন। জেলার চরাঞ্চলে এ কার্যক্রম চলছে বেশি। প্রায় প্রতি পরিবারই দুই-চারটি গরু পালছে।
খামারি ও উদ্যোক্তারা যাতে বিষাক্ত কোনো রাসায়নিক ব্যবহার না করেন, সে জন্য পরামর্শ দিয়েছেন জেলা ও উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
শিবপুর উপজেলার মুনসেফরচর গ্রামের খামারি কিবরিয়া গাজী জানান, তাঁর খামারে সাওয়াল, সিন্ধি, নেপালি, অস্ট্রেলিয়া মিক্স ও দেশি মিলে ৮৩টি গরু রয়েছে। ঘাস, দানাদার খাবার, খড়, ভুসি, খৈল গরুকে খাইয়ে গরু মোটাতাজা করছেন। ওষুধ বা রাসায়নিক ব্যবহারের চেয়ে এ পদ্ধতিতে খরচও কম।
কোরবানির হাটের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে খামারের গরুগুলোকে প্রতিদিন অনেক যত্ন নিতে হচ্ছে বলে জানান কিবরিয়া।
মাধবদীর নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী গ্রামের রায়হান ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক হাজি এমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় এক বছর আগে বিভিন্ন জাতের ৩৪টি গরু কিনি। গরুগুলোকে প্রাকৃতিকভাবেই মোটাতাজা করেছি। আগে কম দামে গরু কিনেছি। কোরবানির হাটে ভালো দামে বিক্রি করব, আশা করছি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল সামাদ মিয়া জানান, জেলায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর অনেক বেশি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বড় খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এদের দেখাদেখি অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যত্ন নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়েছেন। ওষুধ ব্যবহার না করে ঘাস, খড়, ভুসি ও দানাদার খাবার খাইয়ে গরুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাচ্ছে খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরো জানান, গরুর মোটাতাজাকরণে রাসায়নিক ব্যবহার রোধে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি হাটে গরু পরীক্ষার জন্য মনিটরিং সেল বসানো হবে। তবে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজাকরণ করায় এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা বেশি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.