জামায়াত-শিবিরসহ সব ধরনের জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ইতিমধ্যে হিজবুত তাহরিরসহ অনেক জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন নতুন নামে যেসব জঙ্গি সংগঠন আসছে সেগুলোও নিষিদ্ধ করা হবে। রোববার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করেন। কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানান। বৈঠকে আগের বৈঠকের কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়। ওই কার্যপত্রে ইসলামী ছাত্র শিবির ও আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশসহ সব ধরনের জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গিবাদ নিয়ে। বৈঠকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কাজ করার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি তারা এ ইস্যুতে সজাগ ও সতর্ক থাকতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতেও বলেছে।
এর আগে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে সরকার বিভিন্ন সময়ে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা, শাহাদাত-ই-আল হিকমা, হিজবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে অনেকেই অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনসহ শিবিরের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। কেউ কেউ শিবিরকেও নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। আনসার আল ইসলামসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনসহ যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের ব্যাপারে খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য ফখরুল ইমাম যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কাজ করছে। কিন্তু এর সঙ্গে সরকারের অন্যান্য দফতরকেও যুক্ত করা প্রয়োজন। যারা মাঠপর্যায়ে যেমন শিক্ষক, কৃষিকর্মী, সমাজসেবা কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী এদেরও জঙ্গিবিরোধী কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন। কমিটি এজন্য সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের অবস্থান থেকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কাজ করার সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে দেশের সব থানার ওসিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ধর্মীয় চেতনাবোধ জাগ্রত করতে নির্দেশ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি বলেন, বিষয়টি প্রতিপালনে কাজ করার জন্য আমরা সব ওসিকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে মসজিদের ইমাম ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাতে জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়ার মতো বক্তব্য দিতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইমাম-শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, এনজিওসহ সবার সমন্বয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশ বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকার পুলিশ বাহিনীতে নতুন ৫০ হাজার পদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে পুলিশ অধিদফতরের বিদ্যমান ইউনিটের জন্য মোট ১৩ হাজার ৬৪১টি নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির পক্ষ থেকে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
কমিটির সভাপতি টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মোজম্মেল হোসেন, শামসুল হক টুকু, ওমর ফারুক চৌধুরী, ফরিদুল হক খান, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম এবং কামরুন নাহার চৌধুরী অংশ নেন। এছাড়া বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.