কোরবানির পশুর হাটে এবার লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। ব্যবহার বাড়ছে ফেসবুক, হোয়াটসআপ, ইমোর। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এর ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, সিলেটের লাখ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যে। জীবিকার তাগিদে তারা প্রবাসে বসবাস করলেও দেশের ঈদ পার্বণের সঙ্গে তারা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকেন। কোরবানির ঈদ এলেই সিলেটের প্রায় প্রতিটি বাসা-বাড়িতে প্রবাসীদের উদ্যোগে পশু কোরবানি দেয়া হয়। এ কারণে সিলেট নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রবাসীদের ঘরে ঘরে পশু কোরবানির ধুম পড়ে। কোনো কোনো পরিবারে একাধিক পশুও কোরবানি দেয়া হয়। কে কার চেয়ে ভালো পশু কিংবা বেশি দামে কেনা পশু কোরবানি করবেন এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এতদিন টাকা পাঠিয়েই পশু কোরবানির পর্ব সেরেছেন প্রবাসীরা। কিন্তু এবার পশু ক্রয়, জবাই ও মাংস বিতরণেও প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসে দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবেন। কোরবানির ঈদ সামনে। গতকাল ছিল সিলেটের প্রধান হাট কাজিরবাজারের হাট বাজারের দিন। দুপুরের পর বাজারে বিপুল পরিমাণ ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে বেশি দামি গরুর পালে প্রবাসী ক্রেতাদের স্বজনদের ছিল ভিড়। বাজারের মূল আড়তের পাশে লাখ টাকা দামের গরু দরদাম করছিলেন সিলেটের এক ব্যবসায়ী। দরদামের একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা ছেলে ফেসবুকে লাইভ দৃশ্যে গরু দেখান প্রবাসে থাকা ভাইকে। একই সঙ্গে গরু পছন্দ হয়েছে কী না মতামত জানতে চান। একই সঙ্গে দরদামও নিয়ে আলোচনা হয়। এই ভাবে বিকাল পর্যন্ত প্রবাসীরা বৃটেন কিংবা আমেরিকায় বসে পছন্দের পশু ক্রয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর, ছাতক, গোলাপগঞ্জ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ কয়েকটি উপজেলায় কোরবানির পশুর হাটের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বনাথ বাজারের ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ জানিয়েছেন, প্রবাসীরা এতদিন টাকা পাঠালেও পছন্দের পশু ক্রয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারতেন না। কিন্তু এবার প্রবাস থেকে সরাসরি কেনার আগে পশু পছন্দ করতে পারছেন। পাশাপাশি দরদামও সেরে নিচ্ছেন। এতে করে প্রবাসীরা তাদের পছন্দের পশু কোরবানি দিতে পারছেন। ওসমানীনগরের জাকির হোসেন জানালেন, প্রতি বছরই প্রবাসে থাকা স্বজনদের পাঠানো টাকা দিয়ে তিনি পশু কোরবানি করেন। এবার আগেভাগেই লন্ডনে থাকা তার ভাই জানিয়ে দিয়েছেন বাজারে গিয়ে পশু পছন্দ করার আগে তাকে ইমোর মাধ্যমে দেখাতে। পছন্দ হলে তিনি জানিয়ে দেবেন। কোরবানির পশুর হাটে শুধু পশু পছন্দেই ব্যবহার হচ্ছে না প্রযুক্তি, সিলেটের কাজিরবাজার পুরোটাই চলে গেছে প্রযুক্তির হাতে। গতকাল এই হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন জানালেন, কাজিরবাজারের এমন অংশ নেই যেখানে সিসিটিভি নেই। গোটা বাজারই সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। বাজার কর্তৃপক্ষ প্রধান ‘আসিল’ থেকে বসে সিসিটিভির মাধ্যমে গোটা বাজার মনিটরিং করছেন। এতে করে চুরি, ছিনতাই অনেকটা কমে গেছে বলে জানালেন তিনি। একই ভাবে জালনোট শনাক্ত করার জন্য কাজিরবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল থেকে বাজারে জাল নোট শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ডাক্তার নিয়োগ: সিলেটে স্থানীয় পশু ক্রেতাদের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে না। এ কারণে বাইরে থেকে পশু আমদানি করতে হয় বেশি। শেষ মুহূর্তে বাজারে ভারতীয় ও নেপালি পশুর আধিপত্য বেশি থাকে। দেশের খামারের পশুও উঠে বেশি। গেলো কয়েক বছর ধরে মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে দাম বেশি পাওয়ার জন্য পশু কোরবানি হাটে তোলা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে এবার প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারে আগে থেকে সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তার নিয়োগ করেছেন। প্রশাসন থেকেও ডাক্তার দিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান কাজিরবাজার হাটের কর্তৃপক্ষ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.